বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে কোথাও ফাঁকা কোথাও প্রাইভেটকারে সড়কে জট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:২৫ |  আপডেট  : ১৯ মে ২০২৪, ১৩:৩৯

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গতকাল (বুধবার) থেকে শুরু হয়েছে সরকারঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধে নিয়ন্ত্রিত চলাচল। গতকাল প্রথমদিনে বেশ কড়াকড়ি থাকলেও দ্বিতীয় দিনে খানিকটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে রাস্তায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আট দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর সড়কে বেড়েছে প্রাইভেট কারের উপস্থিতি। পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোথাও কোথাও যানজট লাগতেও দেখা গেছে।

ব্যাংকসহ জরুরি যেসব অফিস খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রাস্তায় নেমে অফিসে পৌঁছাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কর্মীদের অফিসে নিয়ে যেতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে দেখা গেছে অফিসে পৌঁছানোর উপায় কর্মীদেরই খুঁজে বের করতে হয়েছে।   

দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না। রিকশা চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া রিকশাওয়ালারা ভাড়াও হাঁকছেন অনেক বেশি।

রাস্তায় গাড়ির চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা থাকলেও পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোনো কোনো সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেসব সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। 

ব্যাংকসহ জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিসে যাওয়ার জন্য তাদের কাছে কোনো বাহন না থাকায় রিকশা বা প্রাইভেটকারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেটাও সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভাড়াও চাচ্ছেন অনেক বেশি।  

রামপুরা ব্রিজে রিকশার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ব্র‍্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. জাহিদ। তিনি বলেন, ১ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো রিকশা মহাখালী যেতে চাচ্ছে না। আর একটা প্রাইভেট কার পেয়েছিলাম। কিন্তু ভাড়া চায় ৫০০ টাকা।  সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকা থেকে মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে যাবেন নার্স সেবিকা রানী। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, রাস্তায় কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। হাসপাতালে এখন কীভাবে যাব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সঙ্গে এত লোককে গাড়ি সার্ভিস দিতে পারছে না। তাই আমরাও ভোগান্তিতে পড়েছি।

এদিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে দেখা যায় বিধিনিষেধ অমান্য করছেন অনেকে। জরুরি কোনো প্রয়োজন না থাকলেও অনেককে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিস টাইম হওয়াতে তারা এখন কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন।

মুভমেন্ট পাসের বিষয়ে জানতে চাইলে মেরুল বাড্ডায় বসানো একটি চেক পোস্টে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন অফিস টাইম। এমনি এমনি কেউ বের হয়নি। আমাদের যখন প্রয়োজন মনে হবে তখন আমরা মুভমেন্ট পাস চেক করব।

তবে অনেকের অভিযোগ, মুভমেন্ট পাস নিতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছেন তারা। বিষয়টি নজরে আনা হলেও মানতে নারাজ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।

বাজার করতে নিজের মোটরবাইক নিয়ে বের হয়েছিলেন মোকাব্বির আহমেদ। মধ্যবাড্ডায় পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়েন তিনি। মুভমেন্ট পাস না থাকায় তাকে গাড়িকে দেয়া হয় এক হাজার টাকার মামলা। মোকাব্বির বলেন, ‘কাঁচাবাজার করতে বের হয়ে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হলো।’

‘মুভমেন্ট পাস’ কেন আনেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নানাভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওয়েবসাইট থেকে সেটা কোনোভাবেই করতে পারছিলাম না। পুলিশকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না।’

করোনা মহামারির মধ্যে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পূর্ণকালীন না হলেও, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্থাৎ তিন ঘণ্টা লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

১২ এপ্রিল সরকারের দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের আনা-নেয়ায় প্রতিষ্ঠানকে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে। এসবের কারণে সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালিত গাড়ির উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়।

বৃহস্পতিবার অবশ্য সড়কে নামা রিকশা নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি পুলিশ। টহলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, ‘রিকশায় অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছে। ব্যাংক ও কিছু অফিস খোলা থাকায় অনেকে অফিসে যাচ্ছেন। তাই আমরা এই সময়টাতে রিকশা চলাচলে কিছুটা ছাড় দিচ্ছি।’

অফিসের সময় পেরিয়ে গেলে আবারও যাত্রীদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না তা চেক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মিনিট্রাকও এসময় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে।

চলমান বিধিনিষেধে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাসমূহ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এসবের মধ্যে রয়েছে- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে এসে সড়কে দেখা মেলে অনেক সাধারণ পথচারী। তাদের বিষয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত