বিএনপি বন্ধ করেছিল, আমরা প্রমাণ করেছি রেলকেও লাভবান করা যায়: প্রধানমন্ত্রী

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৩৬ |  আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিআরটিসিকে যেমন লাভবান করেছি, রেল যেটাকে অলাভজনক বলে বন্ধ করতে বলা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার, আজকে সেটা চালু করে আমরা এটাও প্রমাণ করেছি রেলকেও লাভবান করা যেতে পারে এবং করা যায়।

আজ বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১টি ব্রডগেজ ও ১টি মিটারগেজ কোচ সম্বলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর এবং ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকমোটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ ভৌগলিক সীমানায় অনেক ছোট। জনসংখ্যা সেদিক থেকে অনেক বেশি। সব থেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। আর সেই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানুষ যোগাযোগের জন্য সব থেকে অল্প খরচে দ্রুত সময়ে যেন পণ্য পরিবহন করা যায় এবং মানুষ চলাচল করতে পারে। আমাদের নৌ-পথ, সড়ক পথ, বিমান পথ আছে কিন্তু রেল তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সব থেকে বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারে রেল আবার মানুষ যাতায়াতও করতে পারে রেলে অল্প খরচে।

সব থেকে দুঃখের বিষয় যে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের বিআরটিসি (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন), রেল বন্ধ করার পরিকল্পনা—এ সবগুলোর পরামর্শ দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে রেলের ১০ হাজার কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অনেক রেল লাইনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেল আসলে মুখ থুবড়েই পড়ে। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখন আমরা চেষ্টা করেছি এই রেলকে আবার নতুনভাবে গড়ে তোলা এবং মানুষের যোগাযোগকে সুগম করার, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়বার যখন আমি সরকারের আসি তখন সিদ্ধান্ত নেই রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় করার। কারণ পৃথক মন্ত্রণালয় না করলে আলাদা বাজেট পাবে না, আলাদাভাবে প্রজেক্ট নিতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না। তাই ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর এই সিদ্ধান্ত নেই এবং ২০১১ সালে আমি রেল মন্ত্রণালয় গড়ে তুলি। রেল সম্প্রসারণ করা, রেলকে আরও উন্নত করা, মানসম্পন্ন করা; মানুষ যাতে রেলে যাতায়াত করতে পারে, পণ্য পরিবহন করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা আমি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিয়েছিলেন যমুনার ওপর সেতু নির্মাণ করবেন। সেতু নির্মাণের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল পরবর্তীতে সেখানে কোনো রেল সংযোগ ছিল না। অনেক উন্নয়ন সহযোগীর প্রচণ্ড বাধাও ছিল। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাকে নিজেই বলেছিল, এখানে রেল সেতু করলে সেটা লাভজনক হবে না। আর আমার কথা ছিল এটাই সব থেকে বেশি লাভজনক হবে। সেখানে আমি রেল সংযোগ করি এবং দেখা গেল আমাদের কথাটাই ঠিক। এই রেল সংযোগের ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমাদের রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুগম হয় এবং রেলই সেখানে সব থেকে বেশি লাভজনক।

আমরা রেল ব্যবস্থাকে বর্ধিত করা, যেসব অঞ্চল রেল নেই সেখানে রেল লাইন নিয়ে যাওয়া এবং রেলের ব্যাপক সম্প্রসারণের পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। যার ফলে যে কোনো দুর্যোগেও রেল মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে নতুন নতুন রেল লাইন করছি, ডুয়েলগেজ রেল লাইন করে দিচ্ছি। মিটারগেজকে আমরা ডুয়েলগেজ করে দিচ্ছি যেন রেল যোগাযোগ আরও বাড়ে, সেই সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন লোকমোটিভ কেনার জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি—বলেন তিনি।

সরকারের লক্ষ্য দেশের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ করা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একেক অঞ্চলে অনেক পণ্য উৎপাদন হয়। সেগুলো সহজলভ্য করে দেওয়া। বাজারজাত করার সুযোগ করে দেওয়া। যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত হবে এবং আমাদের মানুষগুলো লাভবান হবে সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের রেলে লোকবলের অভাব আছে। লোকবল আমাদের বাড়াতে হবে। তার জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটা দ্রুত কার্যকর করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার যে অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাঙালি জাতির জন্য সেটা আমাদের দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই জাতির পিতার নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল, বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যেত না-তার ছবিটাও দেখানো যেত না। এমনই একটা পরিবেশ ছিল। ইতিহাস আপন গতিতে ফিরে আসে। ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না এবং সেটাই আজ প্রামাণিত সত্য। আজকে শুধু বাংলাদেশে না, সারা বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার অবদান এবং সেই সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে।

তিনি বলেন, কদিন পরে ঈদ। ঈদের আমাদের চলাচল আরও বৃদ্ধি পাবে। আজকে যে নতুন লোকমোটিভ চালু হতে যাচ্ছে, দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে-সহজভাবে ঈদের উৎসবে যোগ দিতে পারবে। নিজের আপন ঘরে ফিরতে পারবে। সেই সুবিধাটা হবে। দেশের মানুষের সেবা করাটাই হলো আমাদের কাজ। এক সময় বলা হয়েছিল বিআরটিসি বন্ধ করে দেওয়া হবে কারণ সেটা লাভজনক না। সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটুকু লাভ করল, কতটুকু লাভ করল না সেটার থেকে বড় কথা মানুষের সেবা কতটুকু দিতে পারলো। মানুষ কতটুকু সেবা পেল। মানুষের জীবনমান কতটা সহজ হলো, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আর সব জায়গায় সব কিছু যে লাভবান হবে সেটা না কিন্তু লাভবান করা যায়। আমরা বিআরটিসিকে যেমন লাভবান করেছি, রেল যেটাকে অলাভজনক বলে বন্ধ করতে বলা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার, আজকে সেটা চালু করে আমরা এটাও প্রমাণ করেছি রেলকেও লাভবান করা যেতে পারে এবং করা যায়। রেলও আজ লাভবান প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখানে লোকবল আরও ভালোভাবে দিতে পারলে, লাইনগুলো সম্প্রসারিত করতে পারলে এবং নতুন নতুন আমরা যে লাইন করছি সেগুলো চালু হয়ে গেলে আমি মনে করি এটা আরও লাভবান হবে। রেলে যারা কাজ করেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন।

আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে মাঝে মাঝে বিপত্তি আসে, এটাও দুঃখজনক। যখন আমরা নতুন কোচ-লোকমোটিভ কিনলাম সে সময় বিএনপি শুরু করল অগ্নি সন্ত্রাস। সব থেকে দুঃখজনক, নতুন রেলগুলো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে সেই রেলে আগুন দেওয়া হলো। রেল লাইন, রেল কোচ, রেল ইঞ্জিন বিএনপি পুড়িয়ে দিয়েছিল। এটা নাকি তাদের আন্দোলন। আমি জানি না মানুষকে পুড়িয়ে বা চলন্ত বাস-গাড়ি অথবা রেলে-লঞ্চে আগুন দিয়ে এটা কোন ধরনের আন্দোলন। এটা তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অবশ্য তারা তো ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে ক্ষমতায় বসে প্রতিষ্ঠিত পার্টি, জনগণের মধ্য থেকে তো উঠে আসেনি! কাজে জনগণের কল্যাণের দিকে তাদের দৃষ্টি থাকে না। ক্ষমতার লোভটাই তাদের বড়। মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি এগুলো তো তাদের কাজ ছিল। তারা তো দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করেনি, বলেন তিনি।

দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেগুলো পুনর্গঠিত করেছি এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন আবার চালু করতে পেরেছি। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল এখনো রেল লাইন দেখেনি। সেসব অঞ্চলে যেমন বরিশাল বিভাগ। সেখানে রেল লাইন স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। আমাদের মাটি অনেক নরম। এটা বিবেচনা করে কীভাবে, কতটুকু জায়গায় আমাদের রেল লাইন করা দরকার সেগুলো আমরা বিবেচনা করেছি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত