বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেখান থেকে সহজে নামানো যাবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২১, ১৯:৪৮ | আপডেট : ৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৪৯
বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেখান থেকে সহজে নামানো যাবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পিছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবোই, ইনশাআল্লাহ।
সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।
বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে অবনমন করা বা নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ—আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় সম্মানজনক ২ হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে; দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে; দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণ হয়েছে; মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যুদ্ধ-বিধস্ত দেশ, তার উপর শত শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি। শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য-পীড়িত মানুষের এ জনপদকে একটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধ-পরবর্তী দেশ গড়ার কাজে যেসব বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।
এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য অংশে প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, খ্যাতিমান সাংবাদিক মার্ক টালির ধারণকৃত ভিডিও বার্তা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ভ্রাতৃপ্রতীম মালদ্বীপের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানান।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বাণী পাঠানোয় বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা চীন, কানাডা এবং জাপানের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মালদ্বীপের ফাস্টলেডি ফাজনা আহমেদ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা খানম, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা প্রধান, সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক থিমে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং এর পর পরই শত শিশুশিল্পীর সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
মুজিববর্ষের থিম সং-এর মিউজিক ভিডিও পরিবেশনার পর বিমানবাহিনী কর্তৃক ফ্লাই পাস্টের রেকর্ডকৃত ভিডিও প্রচার করা হয়। আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত অডিও-ভিজ্যুয়ালে তুলে ধরা হবে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সাথে গান পরিবেশন, বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকী চিঠি উৎসর্গ, ‘মুজিব শতবর্ষের কার্যক্রম ফিরে দেখা’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন করা হবে।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধু রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় প্রথম দিনে আজকের আয়োজনে থাকছে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের নেতৃত্বে একটি বিশেষ পরিবেশনা।
বর্ণিল আতশবাজি ও লেজার শো’র মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম দিনের জমকালো আয়োজন। বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান শেষ হবে রাত ৮টায়।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান সকল টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিওভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত