বাংলাদেশে নতুন ধরণের সাহিত্য, গ্রাফিক উপন্যাস 'ব্লাডি ম্যারি'

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৬ |  আপডেট  : ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪

গ্রাফিক বা চিত্র উপন্যাস বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে একদমই নতুন ধরণের একটি প্রচলন। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ নামক বইটি প্রকাশিত হয়। তবে বাংলাদেশে অনেক গ্রাফিক ডিজাইনার রয়েছেন, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই গ্রাফিক উপন্যাস লেখার সাহস করেন। তাদের মধ্যে একজন তরুণ গ্রাফিক ঔপন্যাসিক 'কাজী জিদান মিম'। তিনি এ আই দ্বারা নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র-উপন্যাস “Bloody Mary” রচনা করেছেন। 

গ্রাফিক উপন্যাস হচ্ছে এক প্রকার গদ্য সাহিত্য যেখানে গল্পটি কমিকের মতো করে পাঠকের কাছে পরিবেশন করা হয়। এর পরিধিটি অনেক বড় এবং এটি কাঠামোর দিক থেকে ছোটগল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, এবং বিভিন্ন বিভাগে এটি বিভক্ত। গ্রাফিক উপন্যাসে আকৃতি তুলনামূলক ভাবে বড় হয় এবং কমিক ম্যাগাজিনের মতো প্রকাশনাগুলোতে এটি প্রকাশ পায়। সেই সাথে এটি বই হিসেবেও প্রকাশিত হয়

আসন্ন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হবে বাংলাদেশ এর প্রথম এ আই দ্বারা নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র-উপন্যাস “Bloody Mary”। এর আগে “মানবজাতির গ্রহণ” নামক একটি এ আই দ্বারা নির্মিত মিনি কমিক বই 'সায়েন্স বি' নামক একটি প্রকাশক.২০২৩ সালের ১৫ ই জানুয়ারি অনলাইনে প্রকাশ করে। কিন্তু সেটি ছিল শুধু একটি ১৭ পৃষ্ঠার স্বল্পদৈর্ঘ্য ওয়েব কমিক, যার কোনো ছাপানো মুদ্রনও প্রকাশিত করা হয়নি। পার্থক্যগত দিক থেকে, একটি ওয়েব কমিক সাধারণত ৩২ পৃষ্ঠা বা এর ছোঁটোগল্প নিয়ে গঠিত, যা শুধুমাত্র অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে, ৩২ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার মধ্যে বিস্তৃত গল্পকে চিত্র-প্রবন্ধ বলা হয়, যা একটি ঘনীভূত অথচ সম্পূর্ণ বর্ণনামূলক কাহিনি বলে থাকে। বিপরীতে, একটি চিত্র-উপন্যাস, ১০০ থেকে ৩০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত , যা কোনো কাহিনি বলার জন্য আরও বিস্তৃত স্বাধীনতা প্রদান করে। 

চিত্র-প্রবন্ধ ও চিত্র-উপন্যাস সাধারণত শুধু মুদ্রিত বই হিসাবেই পাওয়া যেত। কিন্তু আজকাল সেটা অনলাইনে ইবুক আকারেও অনেকে প্রকাশ করে থাকেন। সেই হিসাবে ৩০০ পৃষ্ঠার মুদ্রিত 'Bloody Mary' বাংলাদেশ এর প্রথম এ আই দ্বারা নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র-উপন্যাস। 'Bloody Mary' এর বিস্তৃত কাহিনির কাঠামো, সমন্বিত শৈল্পিকতা এবং নিমগ্ন সংলাপ, এ আই দ্বারা নির্মিত সাহিত্যকর্মের জন্য এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করে। এর গল্পের প্রথম খসড়া এবং সংলাপ প্রাথমিকভাবে ChatGPT-4 ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, যা OpenAI এর একটি এ আই মডেল। পরবর্তীতে গল্পের গঠন এবং চরিত্রের ব্যক্তিত্বের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করার জন্য এ আই দ্বারা নির্মিত খসড়াটিকে সূক্ষ্মভাবে সংশোধন ও পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া বই এর চিত্রসমূহগুলো, DALL·E-3 এবং Adobe Firefly-এর মতো এ আই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। চিত্রগুলিকে পরবর্তীতে “Adobe Photoshop” এ সংশোধন, পরিমার্জন এবং পুনঃসম্পাদন করা হয়েছে। চিত্র উপন্যাস জুড়ে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ শিল্প শৈলী ও সমন্বয় বজায় রাখার জন্য এই সূক্ষ্ম প্রক্রিয়াটি সৃজনশীল দিকনির্দেশনার সাথে প্রয়োগ করা হয়েছিল। 

'Bloody Mary'- এর প্রেক্ষাপট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রঙ্কস এলাকার এক কাল্পনিক ঘটনা। লেখক কাজী জিদানের মতে এটা তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫ পাঁচ বছরের প্রবাস জীবনের বিভিন্ন ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। কাহিনিতে ব্রঙ্কসের হোমলেস বা গৃহহীনদের সমস্যা ও তাদের  মাদকদেবনের সমস্যাকে এবং তাদের পুলিশের ব্যর্থতা ও অবহেলাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসাবে তুলে ধরা হয়। 

কাহিনির শুরুতেই দেখানো হয় একটি মেয়ে তার প্রেমিককে খুন করে পলাতক হয় এবং পুলিশের অবহেলার কারণে কিভাবে সেই মেয়ে আবার অন্য একটি ছেলেকে তার ভুক্তভুগিতে পরিণত করে। সেই মেয়েটিই হলো এই কাহিনির প্রধান চরিত্র ও খলনায়িকা ম্যারি এবং তার ভুক্তভগি ও কাহিনির নায়ক লিয়াম ইভান । ম্যারি আর ইভেনের পরিণতি কি হয়, তা জানার জন্য পাঠকদের দের অপেক্ষা করতে হবে আসন্ন ২০২৪ একুশে বই মেলা এর জন্য। যা এর শুভমুক্তি এর পর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এর একটি যুগান্তকারী ভৌতিক সাহিত্য হবে। 

লেখক কাজী জিদান মিম বলেছেন, 'বাংলাদশের সাহিত্য এক সময় ইউরোপীয় সাহিত্যকেও টেক্কা দিয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে লেখকদের আন্তর্জাতিক বাজারকে অবহেলার কারণে বাংলাদেশি সাহিত্য আবার পিছিয়ে পরেছে বিশ্ব বাজারে। কিন্তু পাশের দেশ ভারত এর সাহিত্য আজও পশ্চিমা বাজার এ তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। যার একটি বড় কারন বাংলাদেশি সাহিত্য বলতে আমরা শুধু বাংলা ভাষার সাহিত্যকে বুঝি, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। একটি কাহিনি যা একজন বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশদ্ভুত কেউ সেটা বাংলা বা ইংরেজি বা কোনো আঞ্চলিক অথবা আদিবাসী ভাষায় লিখলেও তা বাংলাদেশি সাহিত্য। তাই বাংলাদেশি লেখকরা ইংরেজি ভাষায়ও তাদের কাহিনি সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারেন। 

তিনি আরো বলেন, তরুণ লেখকদের মেধা প্রয়োজনীয় প্লাটফর্ম পায় তাহলে অন্যান্য আন্তর্জাতিক লেখক যেমন, Stephen King, Vikram Chandra, R. L. Stine, Shweta Taneja, Bram Stoker, Kiran Manral, Edgar Allan Poe, ইত্যাদি তাদের মত বাংলাদেশ এর গ্রাফিক্স, কার্টুন অথবা উপন্যাসও বিশ্বমঞ্চে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। “Bloody Mary” সেই রকম ইন্টারন্যাশনাল সাহিত্যিক মান বহন করে। ইংরেজি কালচারের প্রেক্ষাপট নিয়ে শুরু করেছি, পাঠকের উৎসাহ পেলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ বা আমাদের উপমহাদেশীয় কালচার যেমন, মাধুবানী বা প্রাচ্যকলা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তাই আপনাদের বাংলাদেশি এই চিত্র-উপন্যাস বইটিকে পর্যাপ্ত সমর্থন করার জন্য আসন্ন ২০২৪ একুশে বই মেলাতে আসার জন্য আহ্বান করা হল।

 

সান
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত