বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় স্মরণে
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২১, ১১:৫৭ | আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৩৭
বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ২৬ শে জুন (বাংলা ১২৪৫ সালের ১৩ ই আষাঢ়) নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শনিবার তার ১৮৪তম জন্মদিন। তাঁর পিতার নাম যাদপচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়। তিনি মেদিনীপুরে ডেপুটি কালেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয় কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্রাচার্যের কাছে। পিতার অতি আদরের ৩য় সন্তান বঙ্কিম অসাধারন মেধাবী ছিলেন। তিনি একদিনেই বাংলা বর্ণমালা আয়ত্বে এনেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৪৪ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে এসে ভর্তি হন।
১৮৪৯ সালের ফেব্রুয়ারিমাসে মাত্র এগার বছর বয়সে পাঁচ বছরের এক বালিকার সাথে তার বিয়ে হয়। একই বছর হুগলী কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর ‘সংবাদ প্রভাকরে’ কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিশ টাকা পারিতোষিক লাভ করেন। তাঁর সেই কবিতার নাম—‘কামিনীর উক্তি। তোমাতে লৌ ষড়ঋতু ।’ হুগলী কলেজে অধ্যয়নকালে কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের উৎসাহে ‘সংবাদ প্রভাকর’ ও ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’-এ গদ্য-পদ্য লিখতে শুরু করেন। ১৮৫৬ সালে হুগলী কলেজে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃত্বিতের জন্য তিনি দুই বছরের জন্য মাসিক বিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর ১৮৫৭ সালে তিনি আইন পড়ার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এ পরীক্ষায় দশ জন ছাত্রের মধ্যে তিনি সহ দুইজন পাশ করেছিলেন। একই বছর যশোর জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে যোগদান করেন। ফলে আইন পরীক্ষা আর দেওয়া হল না। বারো বছর পর ১৮৬৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বি.এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
যশোরে অবস্থানকালে ১৮৫৯ সারে তাঁর স্ত্রী মারা যায়। ১৮৬০ সালে তিনি পূনরায় বিয়ে করেন। যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাকে আজীবন প্রায় একই পদে কাজ করতে হয়েছে। তাছাড়া তার স্বাধীনতা প্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও ইংরেজ সরকারকে খুশি করেনি। ২৩ বছর চাকুরী করার পর কর্তৃপক্ষের এই অবিচারে অসন্তুষ্ট বঙ্গিমচন্দ্র স্বেচ্ছায় ১৮৯১ সালে চাকুরী থেকে থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বঙ্গিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ প্রকাশিত হয় ২৭ বছর বয়সে, ১৮৬৫ সালের মার্চ মাসে। তার অন্যান্য গ্রন্থ কপালকুন্ডলা (১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯), বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), ইন্দিরা (১৮৭৩), রাধারানী (১৮৭৬), চন্দ্রশেখর (১৮৭৭), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪), কমলাকান্ত (১৮৮৫), সীতারাম (১৮৮৭) এবং কবিতা--‘ললিতা ও মানুষ’ (১৮৫৮), প্রবন্ধ--লোক রহস্য (১৮৭৪), বিচিত্র প্রবন্ধ (১৮৯২), ধর্মীয় রচনা-- ‘কৃষ্ণ চরিত্র’ ( ১৮৮৬) ইত্যাদি।
বঙ্গিমচন্দ্র ‘বন্দে মাতরম্ ’ গানের রচয়িতা -- যে গান তৎকালীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে উৎসাহিত করেছিল। পরে এই গান ভারতের জাতীয সংগীত হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে। ২০০২ সালে নভেম্বর মাসে বিবিসি ইন্টানেটের মাধ্যমে ‘বিশ্বের সেরা ১০ টি গান’প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৫৫ টা দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রোতাদের পছন্দ থেকে ২১ শে ডিসেম্বর আইরিশের জাতীয় সংগীতকে প্রথম এবং বন্দে মাতরম সংগীতকে দ্বিতীয় ঘোষণা করেন। বন্দে মাতরম একটি কবিতা যা ১৮৮২ সালে প্রকাশিত আনন্দমঠ উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বঙ্গিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, সাংবাদিক, গীতিকার সহ নানা গুণে গুনান্বিত ছিলেন। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে তাকে আষাঢ়ের মেঘ, বৃষ্টি আর আলোয় আঁকা অপরূপ নিসর্গের শুভেচ্ছা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত