পুলিশের বাড়িতে ডাকাতি, রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্কে থাকে ভাঙ্গাবাসি
প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪৪ | আপডেট : ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৪
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সম্প্রতী ফাঁকাবাড়িতে কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার জের না কাটতেই পুলিশ সদস্যের বাড়িতে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ফ্লাটে ঘুমিয়ে থাকা বৃদ্ধা মা ও ৪ শিশু-কিশোরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরে সবাইকে রশি দিয়ে বাধার পর একই সঙ্গে তাঁর আপন দুই প্রবাসী ভাইয়ের ঘরেও তান্ডব চালায় ডাকাতদল। গতকাল রাত ৩টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে আসাদুল ইসলাম নামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে। আসাদুল গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের ফাঁজিলপুর গ্রামে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে গোপন রাখার শর্তে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতী পাশের গ্রাম আলেখারকান্দায় ফাঁকা বাড়িতে এক বৃদ্ধ কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার রেশ না কাটতেই পুনারায় পুরো উপজেলায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেপরোয়াভাবে বাড়ছে। এদিন পুলিশের বাড়িতে ডাকাতির আগে ওই রাতেই আশপাশের কয়েকজনের বাড়িতে গ্রীল কেটে বসতঘরে ঢুকার চেষ্টা চালায় ডাকাত দলেরা। কিন্তু পারে নি। এতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। রাত নামলেই ডাকাতদের ভয় ও আতঙ্কে কাটছে তাদের।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত তখন ৩ টা বেজে ২০ মিনিট। হটাৎ বাড়ির বাইরে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন মুখোশধারীরা বাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করছেন। এসময় প্রথমেই একজন দেয়াল বেয়ে উঠে সিসিটিভির বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে ফেলছেন। তারপর ওই ভিডিও ফুটেজটি অকেজো হয়ে গেলো। এরপর আরেকটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে- বাড়ির মেইন গেট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছেন ৩ জন মুখোশধারী। কিছুক্ষন পর ফ্ল্যাটের দরজার কাছে লাল গেঞ্জি ও লোহার পাইপ হাতে নিয়ে দরজার সামনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজটি সজরে আঘাত করলো। এরপর সেই ক্যামেরাও অকেজো করেন মুখোশধারীরা। এরপর ৩ টা ৩১ মিনিটের পর থেকে ঘরে প্রবেশ করেই ডাকাতির তান্ডব চালায় ডাকাতদলেরা। তবে, ডাকাত দলেরা বাড়িতে প্রবেশ করার আগে সিসিটিভির ফুঁটেজ নষ্ট করলেও কয়েকটি ফুঁটেজ সংরক্ষন করেছে পুলিশ। ডাকাতির কয়েকটি সিসিটিভির ফুঁটেজ আজ নেটে ছড়িয়ে পরলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
সায়লা ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাত সাড়ে ৩ টার দিকে বাড়ির পেছন সাইডের গ্রীলের তালা ও ফ্ল্যাটের দরজার লক তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ৫-৬ জন ডাকাতদল। এর মধ্যে একজনের মুখ খোলা ছিলো, বাকিরা মুখোশ পরিহিত ছিলো। তারা প্রথমেই সায়লার শাশুড়ির ঘরে ঢুকে। এরপর ফ্ল্যাটে থাকা অন্নান্য শিশু-কিশোরদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। প্রায় দুই ঘন্টা যাবত সবাইকে রশি দিয়ে বেধে রাখা হয়। পরে রুমে থাকা আলমারি ও আসবাবপত্র ভাংচুরসহ লুটপাটের তান্ডব চালায় তারা। এসময় শিশু-ছেলে-মেয়েদের অস্ত্রের মুখে বিভিন্ন ভয়-ভিতি প্রদর্শণ করা হয়। এক পর্যায়ে, ঘরের আলমারিতে রাখা সায়লা ও তাঁর ভাষুরের নগত সোয়া ২ লাখ টাকা ও প্রায় ১২ ভরি স্বর্ণ লুট করে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। আসাদুলের স্ত্রী সায়লা ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, গত রাতে ডাকাতির ঘটনার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হটাৎ এমন কোন ঘটনা তারা মানতে পারছেন না। তাদের শিশু-কিশোরদের ভয় ও আতঙ্ক এখনো কাটে নি। আজ সারাদিন ছেলে-মেয়েগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
থানার ওসি মোকছেদুর রহমান জানান, এক পুলিশ সদস্য ও তাঁর আপন দুই ভাই ইরাক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সরজেমিন গিয়ে কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ সহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশের তদন্তকার্য অব্যাহত রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত