পশ্চিমা চাপের মুখেও বাংলাদেশ স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি অটুট রেখেছে: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ | আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখেও বাংলাদেশ তার স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি অটুট রেখেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই মন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আর রুশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
ইন্দো–প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাতে রুশ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাই, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখানে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে, যাকে তারা তথাকথিত ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল বলছে। এটি পরিষ্কার যে, তাদের এ উদ্যোগ চীন ও রাশিয়াকে অঞ্চলে একঘরে করে দেওয়া। আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে তাদের এ ধরনের উদ্যোগকে প্রতিহত করব।’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের একটি পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে নিয়ে থাকি। আমরা এ অঞ্চলে কোনো ধরনের ছায়া যুদ্ধ দেখতে চাই না।’
রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ পরিশোধে জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘আমরা খুব শিগগিরি অর্থ পরিশোধের উপায় খুঁজে বের করব। আর এ অর্থ নিজস্ব মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। আমরা এমন কারও মুদ্রা ব্যবহার করব না, যারা এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।’
বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশে সফরে আমন্ত্রণ জানানোয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করি। তবে এবারই প্রথম ঢাকায় সফর করলাম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ রাশিয়ার ভালো ও দীর্ঘকালের বন্ধু। গত ৫০ বছর ধরে আমরা আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও সমতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছি। করোনা মহামারিসহ অন্যান্য কঠিন সময়ের মধ্যেও বাংলাদেশ ও রাশিয়া রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে গেছে। আর আজকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সব ক্ষেত্রে আরও গভীর হয়েছে।’
দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের পর বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বছরে দুই দেশের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। আর ২০২২ সালে এ বাণিজ্য ৩০০ কোটিতে পৌঁছেছে। এ বছর দুই দেশের বাণিজ্য কমেছে। এ নিয়ে দুই দেশের আন্তদেশীয় কমিশন কাজ করছে।’
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এরপর দেশ গঠনে অনেক সহযোগিতা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনায় রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রকল্পটি সময়মতো শেষ হবে। রোহিঙ্গা বিষয়ে রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে। রাশিয়া মনে করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া উচিত। এ বিষয়ে ঢাকা মস্কোর সহযোগিতা চেয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, টেকসইভাবে অনেক দিন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি দেবেন। তাদের দেশ থেকে আমরা এলএনজি আমদানি করতে পারি। সেই সঙ্গে ক্লোরাইডও আমদানি করতে পারি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে যে অসুবিধা তৈরি হয়েছে তা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নামেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার সকালে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এরপর রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শুক্রবার দুপুরে দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে তার।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত