কমেছে গরুর দাম, খামারিরা হতাশ
পঞ্চগড়ে রাজনগর পশুরহাটে সেনাবাহিনীর অভিযানে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫, ১০:৩৫ | আপডেট : ৩ জুন ২০২৫, ২১:২১

ঈদের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। রবিবার ছিলো পঞ্চগড় জেলা শহরের রাজনগর পশুর হাট। হাটে ব্যাপক গরুর আমদানি হলেও ক্রেতার সংখ্যা ছিলো অনেক কম। এছাড়াও গেলো হাটের তুলনায় গরু প্রতি ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কম দরে বিক্রি হয়েছে গরু। এতে গরু খামারিরা বেশ হতাশ। তবে সাধ্যের মধ্যে গরু কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারা।
এদিকে জেলার কোরবানির হাটগুলোতে অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী। অতিরিক্ত হাসিল ও ইউনিয়ন পরিষদের পশু বিক্রির অনুমতি পত্র বাবদ টাকা আদায় করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কয়েকটি হাটে জরিমানাও করা হয়।
রবিবার বিকেলে সেনাবাহিনীর অভিযানে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করায় ইজারাদার হারুন অর রশিদকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। এসময় দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইনজামাম সহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৪৩২ বাংলা সনে ভাউলাগঞ্জ হাটটির পরিশোধিত মোট ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ এ বছর হাটটি ইজারা নেন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার নির্ধারিত হাটের দিন। ভাউলাগঞ্জ হাট উপজেলার মধ্যে সব থেকে বড় হাট। উপজেলার পাশাপাশি বাইরে থেকে আসা পর্যাপ্ত গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয় হয় এই হাটে।
জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবিত খাজনা হার অনুযায়ী প্রতি গরুতে শুধুমাত্র ক্রেতার কাছ থেকে ৪৫০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে ও বিক্রেতার কাছ থেকে চাঁদা বাবদ ১০০ থেকে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ছাগল প্রতি শুধুমাত্র ক্রেতার কাছ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও উল্টো বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে এবং ক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা ঈদ বোনাসের কথা বলে আদায় করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা ইজারাদারের পকেটে গেলেও সমপরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতারা।
হাটে গরু কিনতে আসা পাশ্ববর্তী বোদা উপজেলার বড়শশী এলাকার রুপা নামে এক ক্রেতা বলেন, কুরবানীর জন্য ৫৮ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনেছি। আমার কাছে লেখাই বাবদ ৫০০ টাকা নিচ্ছে আর বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা নিছে।
এছাড়া পঞ্চগড় সদর উপজেলার রাজনগর পশুরহাটে ইউনিয়ন পরিষদের নামে টাকা আদায় করায় হাটের চার ব্যাক্তিকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। রবিবার রাজনগর হাটে অভিযানে নেতৃত্ব দেন পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়াম। এ সময় অন্যদের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, রাজনগর পশুর হাটের ইজারাদার আব্দুস সামাদ পুলক সহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাড়িভাসা এলাকার খামারি মনির হোসেন বলেন, আমার খামারের এই ষাড় দুটি বাজারের সবচেয়ে বড়। একটার ১০ মণ আরেকটার ১২ মণ মাংস হবে। আমি দাম চেয়েছি ৯ লাখ টাকা। ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছে ক্রেতারা। এই টাকায় বিক্রি করলে আমার গরুর খাবার খরচই উঠবে না। বাজার অনেক কমে গেছে। ক্রেতারা সংখ্যাও খুব কম।
ক্রেতা জালাল উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে কোরবানির পশুর দাম অনেক কম। সাধ্যের মধ্যেই কেনা যাচ্ছে। আশা করি সাধ্যের মধ্যের দামে গরু কিনে বাড়ি ফিরতে পারবো।
রাজনগর পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি হায়াতুন আলম বলেন, রাজনগর পশুর হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। দাম কিছুটা কম। তবে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। আমাদের অনেক কর্মী কাজ করছে। জাল টাকা সনাক্ত করণে সোনালী ব্যাংকের একটি দল ও গরুর রোগ বালাই পরীক্ষা, গাভী গরু কেনার ক্ষেত্রে গর্ভবতী আছে কিনা তা পরিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা গরুর ফি ৪০০ করে এবং ছাগলের ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। আমাদের এখানে তার চেয়েও প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার বেশি পশু রয়েছে। জেলার ১৬ টি পশুরহাটে পশু কেনা বেচা হচ্ছে। প্রতিটি হাটে অসুস্থ পশু পরীক্ষার জন্য আমাদের টিম রয়েছে।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মব সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা, নাগরিকের চলাচলে বাঁঁধা সৃষ্টি করে আন্দোলন করা বা জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করা, কোরবানির পশুর হাটে অতিরিক্ত হাসিল সহ অন্যান্য ফি নেয়া, চাঁদাবাজি করা সহ যে কোন অন্যায় ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আগের তুলনায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সে কোন সমস্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানে যাবে বলে জানা গেছে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত