পঞ্চগড়ে প্রতীকী লাশ নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৩ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৪৮
ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করছেন হানিফ বাংলাদেশী নামে এক ব্যক্তি। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রায় আধাঁঘন্টা অবস্থান নিয়ে সীমান্ত হত্যা ও দেশে বিদেশী আগ্রাসন বন্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তিনি সীমান্ত হত্যা ও বিদেশী অগ্রাসন বন্ধে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড় থেকে প্রতিকী লাশ নিয়ে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় হানিফ বাংলাদেশীর সঙ্গে আসা তিন যুবক প্রতীকী লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সীমান্তে হত্যা বন্ধে প্রতিবাদ জানান। তারা হলেন, এনইউ আহমেদ, সৌরভ হোসেন বেলাল ও মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।
হানিফ বাংলাদেশীর বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুটি দেশ আছে। একটি ভারত ও অন্যটি মায়ানমার। এই দেশ দুটি সব সময় বাংলাদেশের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। মিয়ানমার ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে নির্যাতন নিপীড়ন করে করে বাংলাদেশে পাঠায়। এসব রোহিঙ্গা নিজেরা মানববেতর জীবনযাপন করার পাশাপাশি, বাংলাদেশেও নানা রকম সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে মর্টার শেল বাংলাদেশে এসে পড়ে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। ওই দেশটির ৩৩০ জন বিজিপি সহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশে অনুপ্রবেশে করেছে। তাদের বাংলাদেশ সরকার সম্মানের সাথে ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনার দায় কে নেবে? অবশ্যই মিয়ানমার সরকারকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ সরকারকে এর দায় নিতে হবে।
ওই হানিফ বাংলাদেশী আরো বলেন, ভারত সব সময় সীমান্তে নিরিহ মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে। গত ২২ জানুয়ারী যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বাংলাদেশের একজন বিজিবি সদস্যকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। গত ৪ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২১ জন বাংলাদেশী বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে আর বাহিনীটির গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১৮৩ জন।
হানিফ বলেন বাংলাদেশের জনগণ সব সময় প্রতিবেশি ও বন্ধু দেশ গুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় কিন্তু প্রতিবেশী দেশ দুইটি বাংলাদেশের সাথে সব সময় বৈরি আচরণ করে। সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার পরে বলা হয় এরা গরু চোর চোরাকারবারি। হতে পারে এরা গরু চোর চোরাকারবারি। তহালে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। গুলি করে হত্যা করবে কেন?। ভারত যদি তাদের দেশের পাচারকারীদের দমন করে তাহলে বাংলাদেশের পাচারকারীরা এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে।
হানিফ বাংলাদেশী আরো বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যখন যে দলই এসেছে, সে দলই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের মানুষের আর্ত মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছেন। শাসকদের এই দুর্বল নতজানুর কারণে ভারত ও মিয়ানমার সব সময় বাংলাদেশের উপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, বিদেশী অন্য দেশ গুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয়ের উপর খবরদারি করার সাহস পাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানুষ কখনও কোন দেশের আগ্রাসন দাদাগিরি মেনে নেয়নি আমাদের বিগত প্রজন্ম। নতুন প্রজন্মও কোন দেশের আগ্রাসন মেনে নেবেনা। বাংলাদেশের মানুষ আর্ত মর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উচ্ছু করে বাঁচতে চায়। হানিফ বাংলাদেশী এই কর্মসূচিতে আমারা দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে দেশের সচেতন মানুষদের এই কর্মসূচী অংশ গ্রহণ করার আহবান জানান।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার জিরোপয়েন্টে শুরু হওয়া প্রতীকী লাশের মিছিল সারা দেশ ঘুরে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্ত গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান হানিফ বাংলাদেশি।
মো. হানিফ ওরফে হানিফ বাংলাদেশির বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার নিয়াজপুর ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তার সঙ্গে থাকা অপর তিনজন হলেন- ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সৌরভ হোসেন বেলাল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মো. আরিফ হোসেন ও ময়মনসিংহ জেলার ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার এনইউ আহমেদ।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলা শহরের তেতুলতলা এলাকায় প্রতীকী লাশ নিয়ে অবস্থান ও মিছিল করেন হানিফ বাংলাদেশী সহ তার সাথে আসা তিনজন।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত