ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ(এনসিবি)-কে নিবন্ধন দেওয়ার আহবান
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৩ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৫২
ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ-এনসিবি'র চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ছাব্বীর, ছাত্রজনতার বিপ্লব ৫ আগস্টকে সরকারি ভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্তি দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবী জানিয়েছেন।
গতকাল [শনিবার] বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও কবি সাহিত্যিকদের সাথে এনসিবি'র মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন যে, দেশের মানুষ দীর্ঘদিন যাবত সীমাহীন ভাবে শোষিত এবং নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্বারা। পতিত আওয়ামী সরকার দেশের জনগণের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার, চিকিৎসা ও সাম্যের অধিকার, মুক্ত চিন্তা প্রকাশের অধিকার এবং গণতন্ত্র সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ন্যায্য অধিকার আদায়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে কোমলমতি ছাত্রদের হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি এই নরপিশাচেরা। দেশের আলেম ওলামা, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে বর্বরোচিত হামলা, পুলিশী নির্যাতনে নারী কিংবা পুরুষ কেউই বাদ যায়নি এদের নির্মমতার হাত থেকে। ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির জন্য দেশের মানুষ নিশিতে নিরবে আল্লাহর দরবারে অজস্র চোখের জল ঝরিয়েছে। অকুতোভয় ছাত্র সমাজ ৫২, ৭১ এবং ৯০ এর মতো ২০২৪ সালেও রক্ত ঝরিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করেছে। মুমিন বান্দাগণের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করে নিমিষেই সকল দাম্ভিকতার অবসান ঘটিয়েছেন। ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনে তুপের মুখে অবশেষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনাসহ প্রায় সাড়ে তিনশো এমপি। বিশ্ব ইতিহাসে আওয়ামী লীগের জন্য রচিত হলো এক কলংকজনক অধ্যায় । এমন পরিণতি থেকে আমাদের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নিতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এনসিবি'র চেয়ারম্যান কাজী ছাব্বীর আরও বলেন যে, দেশ বাঁচলে বহু নির্বাচন আসবে, ভোট দেওয়া যাবে, ক্ষমতায় যাওয়ার আশা পূরণ হবে। এত তাড়াহুড়ো করার কিছু নাই। দেশ সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যথেষ্ট সময় দেওয়া দরকার। বিগত পনেরো বছরের পাকানো জটলা সহসাই সমাধান করা যাবে না। দখলদারিত্ব, চাদাবাজ, অর্থ পাচারকারী, লুটেরা, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, গুম ও খুনীদের অভয় আশ্রমে পরিণত হয়েছিলো পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর গণভবন। এসবের মুল উৎপাটন করতে হলে আমাদেরকে অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হাজারো আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্রজনতার এই বিপ্লবকে স্বার্থক করে তুলতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত সংস্কারের পরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আগে দেশের জনগণের ভোটাধিকারসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠা করে তারপরে ভোটের কথা।
তিনি আরও বলেন যে, ডান বাম ধর্ম বর্ণ জাতপাত এসব বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। দেশের প্রশ্নে সবায়কে নি:স্বার্থভাবে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মুল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে, জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ, সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং দেশের উন্নয়ন ও টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ন্যাশনাল কংগ্রেসবাংলাদেশ- এনসিবি গঠন করা হয়েছে।
সকল নিয়ম কানুন মেনে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে আজও অবধি নিবন্ধন পায়নি এনসিবি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দাসত্ব থেকে নির্বাচন কমিশনকে বেরিয়ে আসতে হবে। ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ- এনসিবি-কে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়ে, নির্বাচন কমিশনকে জনগণের নিকট স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন হিসেবে আস্থা অর্জন করার পাশাপাশি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কাজী ছাব্বীর।
রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ হোটেল মেট্টো লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হাসান স্বপনের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনসিবি'র সিনি: ভাইস-চেয়ারম্যান শেখ জামাল উদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কবি ও গল্পকার ফেরদৌসী আক্তার (নীলা), ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার পারভেজ, মাওলানা লুৎফর রহমান আব্বাসী, শেখ সাবিদ আব্দুল গাফফার, মহিন উদ্দীন, এনসিবি'র চেয়ারম্যান এর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মো: আব্দুল আওয়াল, যুগ্ম-মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক কবি আরিফুজ্জামান জুলহাস এবং শামসুদ্দিন রতন প্রমুখ।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত