নৌকার নির্বাচন করায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

  লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২২, ২০:৫০ |  আপডেট  : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩৬

আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার নির্বাচন করায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পুরো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন ও সাধারণ সম্পাদক অনয় হাসান বেপারী। 

জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনয় হাসান বেপারীর বাবা ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, অনয় হাসান বেপারীর বাবা নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছেন তিনি। 

সূত্রে, বুধবার অনুষ্ঠিত মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভোটের মাঠে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম। তবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই বিলুপ্ত করা ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

অভিযোগ উঠেছে, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনয় হাসান বেপারীর বাবা মামুন বেপারী। বাবা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করেন অনয়। ভোটের মাঠে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার নির্বাচন করার জন্য ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অমান্য করে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির ও সাধারণ সম্পাদক হাসিব। ভোটের মাঠে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেন তারা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী মামুন বেপারী হেরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুরো ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।  

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই কেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মামুন বেপারীর ছেলে অনয় হাসান বেপারী বলেন, অনেক আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। অনেক আগেই কমিটি বিলুপ্ত করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের জন্য বিলুপ্ত করা হয়নি। তাই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়া মাত্রই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

আপনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার নির্বাচনী প্রচার করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবা দীর্ঘ ২২ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু আমার বাবাকে নৌকা দেয়া হয়নি। এটা কি তারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের উপর জুলুম করেনি! তবুও আমি নৌকার প্রচারনায় গিয়েছি। কিন্তু নৌকার প্রচারনায় গেলে সাধারণ মানুষ অনেক কথা বলতো। তাই আর নৌকার প্রচারনায় যাইনি।  

লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাবা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। সেই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আমাদের অপরাধ নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ নেই। অথচ তারা মেয়াদ না থাকার দোহাই দিয়ে আমাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। মূলত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।  

মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনয় হাসান বেপারীর বাবা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে লৌহজং উপজেলা আওয়ামীগের পক্ষ থেকে আমাদের চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যে সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিবো। 

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হেরে যাওয়ায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ক্ষোভ থেকে কমিটি বিলুপ্ত করা হয় তা হলে সেটা খুব দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।  ক্ষোভ থেকে কমিটি বিলুপ্ত করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এজন্য লিখিত অভিযোগ চাওয়া হয়েছে।

লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানতে চাইলে খেপে যান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল। তিনি বলেন, এমন কোনো অভিযোগ থাকলে, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে। যদিও লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সাফাই গান তিনি। বলেন, সেখানে কি শুধু ছাত্রলীগের সভাপতির বাবাই নির্বাচন করছে! নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আরও লোকজন নির্বাচন করছে।

জানা যায়, নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় অনয় হাসান বেপারীর বিরুদ্ধে জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি জানতে চাইলে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রশিদ সিকদার বলেন, নৌকার পক্ষে নির্বাচন করায় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আশা করি জেলা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি আমরা শুনেছি। যদি নৌকার পক্ষে কাজ করায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এজন্য খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত