নারীরা এগিয়ে আসো: খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও জলবায়ু ন্যায্যতার সমাবেশ!

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২৫ | আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৪৩

আজ জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকার সামনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (BKF) ও এপিএমডিডি (APMDD)-এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হলো। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “নারীর শক্তি ও নেতৃত্বে খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং জলবায়ু ন্যায় প্রতিষ্ঠা”। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি-রেহানা বেগম এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড জায়েদ ইকবাল খান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম, জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, নোয়াখালী গ্রাম উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা আমানুর রহামান , ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের নেতা ইকবাল ফারুক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফয়েজ হোসেন,প্রগতিশীল কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সুলতান আহমেদ বিশ্বাস, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন, বাংলাদেশ জায়ীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন, গ্লোবাল ল থিনকার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক স্মিতা রাওম্যান, কসমসের সভাপতি মেহনাজ মালা, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থা সুনু রানী দাস, সিপিআরডি-র কর্মকর্তা আল-এমরান ও বাংলাদেশ কিষাণী সভার নেত্রী আশা মণি প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, ২০২৫ সালে IMF, বিশ্বব্যাংক ও FAO-এর ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময় আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থানীয় কৃষক, নারী শ্রমিক ও সম্প্রদায়ের অধিকার হরণ করে খাদ্য, জমি ও পানিকে বাণিজ্যিকীকরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। বৈশ্বিক উত্তর দেশগুলো তাদের নীতি ও কর্পোরেট শাসনের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য, পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছোট কৃষক, নারী, শহুরে দরিদ্র ও স্থানীয় সম্প্রদায়। নারী কৃষক, শ্রমিক ও নারীযত্নশ্রমীরা খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষার মূল শক্তি। কিন্তু তাদের অবদানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেয়ায়, বৈষম্য ও কর্পোরেট দখল থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় খাদ্য সার্বভৌমত্ব কখনো নিশ্চিত হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, তাপপ্রবাহ, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং শিল্পায়িত কৃষির প্রভাব আমাদের খাদ্য উৎপাদনে বড় হুমকি সৃষ্টি করছে।
সমাবেশ থেকে উল্লিখিত ১০ দফা দাবি হলো: ১. নারীর স্বীকৃতি ও নেতৃত্ব—খাদ্য উৎপাদনকারী হিসেবে পূর্ণ স্বীকৃতি এবং নীতি ও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ২. ভূমি, পানি ও সম্পদের অধিকার—নারী কৃষক ও সম্প্রদায়ের জমি, পানি, বীজ ও অন্যান্য সম্পদ শোষণ, বৈষম্য ও কর্পোরেট দখলমুক্ত করা। ৩. টেকসই ও ন্যায্য খাদ্যব্যবস্থা—বড় কর্পোরেটনির্ভর, কার্বন-নির্ভর শিল্প কৃষি পরিত্যাগ করা, টেকসই, জলবায়ু সহনশীল ও ন্যায্য খাদ্যব্যবস্থা বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ করা এবং স্থানীয় খাদ্য ও দেশীয় ভোক্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। ৪. জলবায়ু ন্যায় ও তহবিল—ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণের জন্য যথাযথ জলবায়ু তহবিল সরবরাহ এবং খাদ্যখাতে ন্যায্য রূপান্তর (Just Transition) ও সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ৫. শ্রম ও মজুরি—নারী কৃষক ও শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহযোগ্য মজুরি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নারীর যত্নশ্রমকে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় মূল্যায়ন করা। ৬. বৈশ্বিক দায়বদ্ধতা—খাদ্য, জমি ও পানি ধ্বংসের দায়ভার গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা। ৭. প্রচারণা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম—স্থানীয় সম্প্রদায় ও স্কুলে খাদ্য ও জলবায়ু সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ফটো অ্যাকশন, কর্মশালা, প্যাম্পলেট বিতরণ ও স্থানীয় প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজন করা। ৮. নারীর ভূমি ও সম্পদের অধিকার নিশ্চিত করা। ৯. খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব অগ্রাধিকার দেওয়া। ১০. খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও জলবায়ু ন্যায়ের জন্য রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক সংস্থা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করা।
সমাবেশ শেষে নারী কৃষক ও অংশগ্রহণকারীরা শ্লোগান ও ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। দেশের বিভিন্ন আঞ্চল হতে আগত শতাধিক নারী কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত