ধানমন্ডি কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ, আটক ৩
প্রকাশ: ৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৬ | আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩
রাজধানীর ধানমন্ডিতে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ১২ তলা ‘কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনে’ রেস্তোরাঁ আছে ১৬টি। ভবনের পেছনে জরুরি নির্গমন সিঁড়িতে রাখা রেস্তোরাঁর মালপত্র। সপ্তম তলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার সিঁড়ি বন্ধ হয়েছে এতে। আগুন লাগলে ওপর থেকে নামার উপায় নেই। ষষ্ঠ ও পঞ্চম তলার সিঁড়িতে আটটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা। অভিযানের পর নোটিশ টানিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভবনের সব রেস্টুরেন্ট। ভবনের মূল গেটের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে নোটিশ। সেখানে লেখা রয়েছে— ‘সকল চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং খাবার হোটেল বন্ধ থাকিবে। শুধুমাত্র দ্বিতীয় তলার মার্কেট এবং নিচ তলার দোকানগুলো খোলা থাকবে। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’
বেইলি রোডের আগুনে ৪৬ প্রাণ গেলেও বাণিজ্যিক ভবনে রেস্তোরাঁর মালিকদের টনক নড়েনি। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের সময় সিঁড়িতে রাখা গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে, প্রাণহানি বেড়েছে। বেইলি রোড ছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, খিলগাঁও, পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও ধানমন্ডিতে আবাসিক ভবনে নিয়ম না মেনে গড়ে উঠেছে হাজারো খাবারের দোকান। বাণিজ্যিক ভবনে অফিস করার অনুমতি থাকলেও রেস্তোরাঁ বানাতে আলাদা অনুমতি লাগে। কিন্তু সেই অনুমতির তোয়াক্কা করছেন না অধিকাংশ ভবন মালিক। ভবনে ভবনে বানিয়ে ফেলছেন ‘ফুড কোর্ট’। ‘ব্যাঙের ছাতা’র মতো গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ, কফিশপ; যেগুলোর রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জায়গা নেই। ঝুঁকি নিয়ে সেসব রাখা হয়েছে সিঁড়িতে কিংবা যত্রতত্র।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের দু’পাশের বহুতল ভবনগুলোর তলায় তলায় রয়েছে রেস্তোরাঁ। কোনো কোনো ভবনে রেস্তোরাঁ ৩০টি পর্যন্ত। অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই; থাকলেও নামমাত্র। ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের গাউছিয়া টুইট পিক ভবনে রেস্তোরাঁ ১৪টি। ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত ব্যাংক ও শোরুম। চতুর্থ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ। কোনো কোনো তলায় তিনটি পর্যন্ত রেস্তোরাঁ রয়েছে। ভবনটির ছাদে অবৈধভাবে গড়ে তোলা রেট্রো রুফটপ রেস্টুরেন্ট ইতিমধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের আটটি রেস্তোরাঁর একটিরও অনুমোদন ছিল না। আমিন আহমেদ সেন্টারের কোনো রেস্তোরাঁর অনুমোদনের সনদ দেখা যায়নি। তবে প্রতিটি রেস্তোরাঁ মালিক দাবি করেন, তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন।
এদিকে জিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলার সিঁড়িতে সিলিন্ডার রেখে রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গ্যাস নেওয়া হয়েছে রাবারের সরু পাইপ দিয়ে। সোমবার (৪ মার্চ) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এখানে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করতে এলে দেখেন সমস্ত দোকান বন্ধ। মূলত, রেস্টুরেন্টের অনিয়মের ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এখানে তদারকি কার্যক্রম চালাবে— এমন খবরে আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ভবনের সব রেস্টুরেন্ট।
ভবনটিতে অভিযান চালানোর পর তা সিলগালা করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। অভিযান চালিয়ে ভবনটি থেকে তিনজনকে পুলিশ হেফাজতেও নেওয়া হয়েছে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত