জ্যামাইকা টেস্টে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে 

দ্বিতীয় ইনিংসে মারকুটে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ২১১ রানের  লিড 

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ |  আপডেট  : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪

 

স্লেজিং সবার জন্য নয়, সব জায়গায় উপযুক্তও নয়। জ্যামাইকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটি আরও একবার বুঝলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্লেজিং করে বাংলাদেশী ব্যাটারদের হাতে মার খেয়েছে ক্যারিবীয় বোলাররা। ১৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে।

এই ইনিংস ব্যাট করতে নেমে টাইগাররা খেলেছে মাত্র ৪১.৪ ওভার। অর্থাৎ অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেছেন শাহাদাত হোসেন দিপু ও মেহেদী হাসান মিরাজরা।

বাংলাদেশের লিড এখন ২১১ রানের। উইকেটে আছেন জাকের আলী অনিক (২৯) ও তাইজুল ইসলাম (৯)।

কিংসটনে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ১৬৪ রান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। এতে ১৮ রানের লিডও পেয়ে যায় টাইগাররা। যে লিড ছিল সফরকারীদের জন্য অনেকটা স্বপ্নের মতো। এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার প্রথম ইনিংসে দুইশর কম রান করেও লিড পেল বাংলাদেশ।

টাইগারদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারিগর হলেন নাহিদ রানা। জ্যামাইকায় গতির ঝড় তুলে একাই তুলে নেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম ফাইফার পূর্ণ করেন রানা। এজন্য ডানহাতি এই পেসারকে খরচা করতে হয়েছে ৬১ রান।

লাঞ্চ বিরতির পর মাত্র ৩ ওভারে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হলে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এরপর আক্রমণাত্মক বোলিং করতে থাকে ক্যারিবীয়রা। এক পর্যায়ে তারা উইকেটে থাকা দিপু ও সাদমান ইসলামকে স্লেজিং শুরু করে। ক্যারিবীয়দের স্লেজিং চরম পর্যায়ে চলে গেলে এতে হস্তক্ষেপ করতে হয় আম্পায়ারকেও। স্বাগতিক দলের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে কথা বলতে দেখায় আম্পায়ারের সঙ্গে।

অপ্রত্যাশিত এসব ঘটনার মারকুটে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৪ বল খেলে ০ রানে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় আউট হলেও নির্ভয়ে ব্যাটিং করেন দিপু ও সাদমানরা। প্রথম ওভারে জেডেন সিলসের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জয়।

২৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে আলজেরি জোসেফের বলে আউট হন শাহাদাত হোসেন দিপু। মিরাজের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি করে ৮২ বলে ৪৬ রান করে আউট হন সাদমান।

মিরাজ ছিলেন আক্রমাণত্মক। ৩৯ বলে ৪২ রান করে শামার জোসেফের বলে বিহাইন্ড দ্য উইকেটে ক্যাচ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জাস্টিন গ্রেভসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৪ বলে ২৫ রান করেন লিটন দাস।

এর আগে ১ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। দিনের শুরুতেই রানার বলে পরপর দুই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর তাসকিন এবং তাইজুলের বলেও দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন হাসান মাহমুদ। তিনিও নেন দুই উইকেট।

নাহিদ রানার আগুনে বোলিংয়ের সামনে কুপোকাত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। ১৪২ কিলোমিটার গতিতে ছুটে আসা বলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি ক্যারিবীয় দলপতি। ব্যাক ফুটে গিয়ে বলটা বলটা ব্লক করার চেষ্টা করেন; কিন্তু ব্যাটের উপরের অংশে লাগিয়ে ক্যাচ তুলে দেন গালি অঞ্চলে। সেখানে নিচু হয়ে আসা ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন বদলি ফিল্ডার জাকির হাসান।

৩৯ রান করে ফিরে যান ব্র্যাথওয়েট। ৩৩ রান নিয়ে নেমে মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারেন তিনি। দলীয় ৮৫ রানের মাথায় আউট হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।

এরপর কাভেম হজকে সহজ ক্যাচে পরিণত করেন রানা। ৪৫তম ওভারের চতুর্থ বলে পুল রতে গিয়েই ব্যাটের উপরের অংশে লাগিয়ে আকাশে বল তুলে দেন হজ। ফাইন লেগে ক্যাচ ধরতে ছুটে যান উইকেটরক্ষক লিটন। কিন্তু তার আগেই সেখানে পৌঁছান তাসকিন। কিন্তু বল বেশি ওপরে থাকায় সহজ ক্যাচটা মিস করে ফেলেন তাসকিন। তার হাত ফসকে বল পড়ে যায় মাটিতে।

এক বল বিরতি দিয়েই হজের উইকেট তুলে নেন নাহিদ রানা। এবার নাহিদ রানার চেয়ে এই উইকেটের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি উইকেটরক্ষক লিটন দাসের। বাজপাখির মত ঝাঁপিয়ে পড়ে যেভাবে কাভেম হজের ব্যাটের কানায় লেগে ছুটে আসা বলটিকে এক হাতে তালুবন্দী করলেন, তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। ৩ রান করে আউট হয়ে যান কাভেম হজ।

অ্যালিক আথানাজেকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। তার বলে বোল্ড হয়েই মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ক্যারিবীয় মিডল অর্ডার। জাস্টিন গ্রিভসকেও ঘূর্ণিতে বোকা বানান তাইজুল ইসলাম। সোজা বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান। ২ রান করে আউট হন গ্রিভস।

এরপর ৫ রান করা জসুয়া সিলভাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসান মাহমুদ। নিজের পরের ওভারে সেট ব্যাটার কিয়েসি কার্টিকেও (৪০) তুলে নেন এই পেসার। লাঞ্চের আগে আলজেরি জোসেফকে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। ১২৩ রানে ৮ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।

৮ উইকেটে ১৩৫ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই শামার জোসেফকে (৬) এলবিডব্লিউ করেন মিরাজ। আর শেষ ব্যাটার কেমার রোচকে (৮) এলবিডব্লিউ করে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা।

সবমিলিয়ে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন নাহিদ রানা। এটিই তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। হাসান মাহমুদ নেন ২ উইকেট।


গ্রা/কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত