দিঘা থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দূরে 'ইয়াস', ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২১, ১১:১৮ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ০৫:২২

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান-নিকোবর দ্বীপের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫৬০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর-পশ্চিমে, ওডিশার পারাদ্বীপ থেকে ৫৯০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে এবং বালাসোর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থান করছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার সকালে এটি বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সেখানে বাতাসে গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। এটি আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এটি ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে আগামী বুধবার। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিবেগ হতে পারে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। আগামীকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে গতিবেগ হতে পারে ১৪৫ থেকে ১৫৫ কিলোমিটার। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিবেগ হতে পারে ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। রাত সাড়ে ১১টার দিকে গতিবেগ হতে পারে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। আগামী বৃহস্পতিবার এটি দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।

এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার রাজ্য সরকার। এই দুই রাজ্যেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশায় ন্যাশনাল ডিজাস্টার ফোর্স (এনডিআরএফ) এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এনডিআরএফের ৩২টি এবং ওডিশায় ২৮টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, আন্দামান ও নিকোবরেও এনডিআরএফের টিম মোতায়েন করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মঙ্গল ও বুধবার সেখানে থাকবেন বলে জানা গেছে। এই রাজ্যের দিঘা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের মতো উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশায় যখন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে, তখন বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার।

সম্প্রতি ভারতে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় তকতে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে। তবে এক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানা আম্পানের চেয়ে দুর্বল হতে পারে এই ঝড়। আম্পানের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার। এতে প্রাণ হারিয়েছিল কমপক্ষে ৮০ জন।

এদিকে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়েছে। এ কারণে সমুদ্রবন্দর সমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার (২৪ মে) সকালে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে; পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। ২৬ মে নাগাদ ওড়িষা-পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছাতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অহসনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে।

রোববার খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত