ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের চিন্তার ভাঁজ

  শফিক স্বপন, মাদারীপুর প্রতিনিধি:

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:২৪ |  আপডেট  : ১১ মে ২০২৪, ২৩:৪২

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সৃষ্ট প্রবল বর্ষণে ক্ষতির শিকার হয়েছে রবি মৌসুমের ফসল। এতে মাদারীপুর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমির রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বল্প আয়ের কৃষকরা। আর মাদারীপুর  কৃষি অফিস, অসহায় কৃষকদের পাশে রয়েছে দাবী করে সরকারী প্রণোদনার চেষ্টার কথা বলেন।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র মাদারীপুর ভারী বর্ষণ হয়েছে। বৃষ্টিতে কৃষকের পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে নষ্ট হচ্ছে। এ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল বপন করা হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমির রবি ফসল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষি অফিসের মাঠ কর্মীরা এ ক্ষতি নিরূপন করেন। 

অফিসের তথ্য মতে, ক্ষতিগ্রস্থ রবি ফসলের মধ্যে সরিষা ২ হাজার ৯৫, মসুর ২ হাজার ১৫২, খেসারী ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর, মাসকলাই ৪৫ হেক্টর, ধনিয়া ৪২০ হেক্টর, পেয়াজ ১ হাজার ৭৫ হেক্টর, রসুন ১ হাজার ২০৫ হেক্টর, কালোজিরা ৪৩০ হেক্টর, আলু ৪০ হেক্টর, ভুট্টা ৫৩ হেক্টর, মিষ্টি আলু ১৪ হেক্টর, গম ৬০২ হেক্টর, মরিচ ৮০ হেক্টর, শাকসবজি ৬৯৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ১৬১ এবং অন্যান্য ৬০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের বাহেরচর কাতলা   কৃষক আনোয়ার বাদশা  বলেন, দু’দিন আগে ১২ কাটা জমির আমন ধান কেটে রেখেছি। দু’দিন ধরে বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে গেল। বৃষ্টি যদি আবারো আসে তাহলে ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় করছি। এছাড়া বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতি হচ্ছে। এখন আমাদের মরণ ছাড়া কিছু নাই।’

রাস্তি এলাকার কৃষক বেলাল খান বলেন, ‘আমাদের এলাকার নিচু জায়গায় যেসব মসুরী, খেসারী ও সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছিল, তা এই ঘূর্ণিঝড়ে তলিয়ে গেছে। কোন ফসলই আর জীবিত নাই। এই পানি না সরলে নতুন করে আর ফসলও চাষ করা যাবে না। অসময়ে বৃষ্টিতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা না করলে আর ঘুড়ে দাড়াতে পারবো না।’ একই কথা বলেন রাস্তি এলাকার একাধিক কৃষক। এছাড়া শিবচর উপজেলার চরাঞ্চল এলাকায় রবি ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা এখনো পানির নিচে।

মাদারীপুর কৃষি অফিসের প্রধান প্রশিক্ষক এসএম সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও শস্যের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। যাতে কোনো ঘাটতির সম্ভাবনা থাকলে সহজেই সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পাশে থাকার উদ্যোগ নিতে হবে। বীজ, সার ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকি কার্যক্রম থেকেও কৃষকদের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।’

এব্যাপারে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদারীপুর জেলার কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলা শেষ পর্যায়ে। বৃষ্টিতে শীতকালিন সবজি, মসুর ও সরিষার ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এখনো পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি। তবে আক্রান্তের পরিমাণ নির্ণয় করা গেছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্র্তারা ক্ষতির পরিমাপ করবেন। আমরা কৃষকদের সাথে রয়েছি। সরকারী বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করবো।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত