সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকরা

গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২২, ১০:১৩ |  আপডেট  : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৫

বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকরা বলেছেন, গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। তাই সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার (১৪মে) বিকালে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস : ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
 
আলোচনায় অংশ নেন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি ও দ্য নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, সহসভাপতি ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কোষাধ্যক্ষ ও মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক ও আরেক অংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার এবং টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী। সভা সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

সভাপতির বক্তব্যে মাহফুজ আনাম প্রশ্ন উত্থাপন করেন, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কেন এত আইন? তিনি বলেন, আদালত অবমাননা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যমকর্মী আইনসহ একের পর এক আইন করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল অপরাধের থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কয়েক গুণ বেশি অপব্যবহার করা হয়েছে। আদালতের রায় পাওয়ার আগেই এই আইনে সাংবাদিকদের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে আইনি বাধাগুলো চিহ্নিত করতে মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ডিজিটাল বাস্তবতায় যেমন অনেক সুবিধা হয়েছে, তেমনি অনেক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি বড় ধরনের বাধা তৈরি করেছে। আবার গণমাধ্যমের বিকাশে নেতৃত্বের দক্ষতা ও মেধার অভাব রয়েছে। ফলে গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটছে না। এই সমস্যা এককভাবে সমাধান সম্ভব না। গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থে মালিক-সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আইনি বাধাগুলো চিহ্নিত করতে মালিক-সম্পাদকসহ সকল সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নতুন আইন ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো পুরনো আইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে। আবার কোনো আইন না থাকায় টেলিভিশন সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটছে না। তাই আইনি জটিলতাগুলো চিহ্নিত করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

সকল সরকারের আমলেই সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি বলে দাবি করেন নুরুল কবির। তিনি বলেন, অতীতের মতো এখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের দখলে থাকে তারা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। অথচ স্বাধীন সাংবাদিকতা সকলের জন্য প্রয়োজন। মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যেখানে মামলা হচ্ছে, সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হচ্ছে, সেখানে আর নজরদারির কী আছে? সরকার বদলায় কিন্তু আইনের প্রয়োগ বদলায় না। আর সাংবাদিকদের বিভাজনের কারণে সরকার সুযোগ নেয়। ভয় থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্ত করতে হলে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় সাংবাদিকরা নিজের ইচ্ছামতো লিখতে পারে না। এ জন্য বিদ্যমান আইনের সংশোধনীর পাশাপাশি আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। নবম ওয়েজ বোর্ড হলেও তা কার্যকর হয়নি। সেটা কার্যকর করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মী আইন পাসের আগে সংশোধন করতে হবে।

সারা দেশের সাংবাদিকরা সরকারের নজরদারিতে আছে বলে উল্লেখ করেন বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়ছে। গত ১৩ বছরে ৪৫ জন সাংবাদিককে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচকে এ বছর বাংলাদেশ ৬১ ধাপ নিচে নেমেছে। সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আগ্রাসীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতন, মিডিয়ার কন্ঠরোধ ও বাক্স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এই কালো আইন। আমরা মনে করি, এই আইন আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, আমাদের Right to Information ACT এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। সামগ্রিকভাবে, বাক স্বাধীনতার এটা একটা বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
এই আইনের ২০টি ধারার ১৪টিই সাংবাদিকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রযোজ্য এবং জামিন অযোগ্য। তাই এই আইনে অভিযুক্তরা যখন আদালতে যাচ্ছেন, তখন তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, জনমত উপেক্ষা করে কালাকানুন দিয়ে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া ফ্যাসিস্ট শাকদের চরিত্র।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত