খানজাহান আলী মাজারের মিঠা পানির কুমির প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ১৯:৩১ |  আপডেট  : ৪ মে ২০২৪, ০৫:২৬

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান [রহঃ] মাজারের দীঘিতে ভারত থেকে আনা মিঠা পানির কুমির প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে। দীঘিতে থাকা কুমির প্রতি বছর ডিম দিলেও তাতে কোনো বাচ্চা ফুটছে না। যার কারণে এ দীঘিতে মিঠা পানির কুমিরের বংশ বিস্তার হচ্ছে না। তাই মাজার দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে দীঘিতে মিঠা পানির নতুন কুমির ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও স্থানীয়রা। বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে অবস্থিত সাড়ে ৬০০ বছরের পুরানো ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান [রহঃ] মাজার। হযরত খানজাহানের শাসনামলে ছাড়া মিঠা পানির কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে মিঠা পানির প্রজাতির ৬টি কুমির এনে এ দীঘিতে ছাড়া হয়। সম্প্রতি দীঘির পূর্ব পাড়ে বীনা বেগমের বাড়ির সামনে মাটি খুড়ে মেয়ে কুমিরটি ৩০টি ডিম দিয়েছে। ওই ডিমগুলো কুমির মাটির নিচে চাপা দিয়ে রেখেছে। প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কুমিরটি ডিমের উপর বসে আছে।

দর্শনার্থীরা বলেন, মাজারের দীঘির কুমির হযরত খানজাহানের ঐতিহ্য। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে। তাই এই কুমিরের বংশ রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাগেরহাট হযরত খানজাহান [রহঃ] মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, হযরত খানজাহান [রহঃ] শাসনামলে এই দীঘিতে মিঠা পানির কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে দুটি কুমির ছেড়ে যান পীর সাহেব। সেই সময়ে ওই কুমিরের দেয়া ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতো। মিঠা পানির কুমিরের বংশ বিস্তাররোধে ভারতের মাদ্রাজ থেকে মিঠা পানির ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। এ নতুন কুমিরের মারামারির কারণে হযরত খানজাহানের শেষ বংশধর একটি কুমির অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মাদ্রাজি কুমির ছিলো হিংস্র প্রকৃতির । হিংস্র হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে মারামারিতে ছয়টি কুমিরের মধ্যে একটি মারা যায়। বাকিদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এখন এই দীঘিতে মাদ্রাজি দুটি কুমির রয়েছে। এই কুমির ডিম দিলেও তাতে কোনো বাচ্চা ফুটছে না। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এখানে এসে কুমির দেখে গেছে, তারা বলেছে কুমির বেশি খাবার খেলে এদের বাচ্চা হবে না। তাই এখান থেকে নিয়ে যাওয়া কুমিরগুলোকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে। ওই কুমির আনা গেলে ডিম থেকে নতুন বাচ্চা ফুটবে। মাজারের কুমির হযরত খানজাহানের ঐতিহ্য। কুমির দেখতে এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন। তাই কুমিরের বংশ র¶ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান মাজারের এই খাদেম।

বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা প্রাণি চিকিৎসক ডা. লুৎফর রহমান বলেন, খানজাহান রহ. মাজারের দীঘিতে যে মিঠা পানির কুমির রয়েছে এই কুমির প্রতি বছরই ডিম দেয়। এই দীঘিতে পুরুষ ও নারী নিয়ে দুটি কুমির রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ কুমিরটির প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে। পুরুষ কুমিরটির ফার্টিলিটি হচ্ছেনা। গত ৩/৪ বছর কুমিরের দেয়া ডিম আমরা প্রকৃতিগত ও কৃত্রিম উপায়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তাতে ডিমের ফার্টিলিটি নেই। যার কারণে মেয়ে কুমিরটি প্রতিবছর ডিম দিচ্ছে ঠিকই তবে তাতে নতুন বাচ্চা ফুটছে না। তাই এই মুহুর্তে যেটা দরকার তাহলো নতুন করে মিঠা পানির দুটি পুরুষ ও দুটি মেয়ে কুমির এনে এই দীঘিতে ছাড়া যায়, তাহলে কুমিরের বংশ বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য তা রক্ষা পাবে। কুমিরের যে খাদ্যাভ্যাস তাহলো কুমির কিন্তু সব সময় খাবার খায়না। তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে এখানকার কুমির বেশি খাবার খেয়ে থাকে। বেশি খাবার খাওয়ার কারণে এদের শরীরে চর্বি জমে যায়। চর্বি জমে যাওয়ায় প্রজনন ক্ষমতা কমে আসে। একারণে তাদের নিয়ম করে পরিমিত খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত