কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধুর যাতায়তের রাস্তা বন্ধ
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৩০ | আপডেট : ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৬
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বিষখালী গ্রামে কু-প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় দিপা রায় নামের এক গৃহবধুর বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।চার বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এক ধরণের বন্ধী জীবযাপন করছেন গৃহবধু দিপা।বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দারস্ত হয়েও প্রতিকার পায়নি অসহায় এই গৃহবধু।
দিপা রায় বলেন, চাকুরীর সুবাধে আমার স্বামী বাদল দাস ঢাকাতে থাকেন। একমাত্র ছেলে সৌম্যকে নিয়ে আমি বাড়ীতে থাকি। আমাদের বাড়ীর পাশেই আমার ভাসুর (বাদল রায়ের চাচাতো ভাই) বিনয় দাস এর বাড়ী। বিনয় দাসের বাড়ীর পাশ দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। প্রায় চার বছর আগে আমরা এখানে বাড়ী তৈরী করি। এখানে বাড়ী তৈরীর পর থেকেই আমার ভাসুর বিনয় দাস আমার উপর ললুপ দৃষ্টি দেয়। আমাকে নানা ভাবে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে নানা অপপ্রচার করে। এরই মধ্যে প্রায় দুই মাস আগে আমার ভাসুর বিনয় ও তার ভাই বিপুল দাসসহ স্থানীয় কয়েকজন আমার বাড়ীতে প্রবেশ করে। এসময় তারা আমাদের চলাচলের রাস্তাটিতে কাঁদামাটি ফেলে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। আমি ও আমার ছেলেকে হত্যার হুমকী দেয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে, তারা আমাদের উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতে সালিশ-বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন দাসের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধান না করে বার বার আশ্বাস দিতে থাকে। সেই থেকে আমি ও আমার ছেলে বাড়ীতে এক প্রকার গৃহবন্দি অবস্থায় আছি।
দিপা রায়ের স্বামী বাদল দাস বলেন, আমার স্ত্রীকে কু-প্রস্তারে বিষয়টি আমি জানি। জায়গার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমাধান করে দেওয়ার কথা বললে আমি এলাকায় আসি। চেয়ারম্যান তিন দিনের মধ্যে সমাধানের কথা বললেও আজ কাল করে করেনি। সে চাইলে যে কোন সময় বিষয়টি সমাধান করতে পারে। কি কারনে সমাধান করছে না তা আমি জানি না। আমার স্ত্রী ও সন্তান চরম সমস্যা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
দিপা রায় এর অপর প্রতিবেশি চন্দনা দাস বলেন, দিপার স্বামী ঢাকায় থাকে। বাড়ীতে দিপা তার ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে একা থাকে। এই সুযোগে বিভিন্ন সময় তার ভাসুর বিনয় ও তার পরিবার দিপাকে নানা ভাবে হয়রানী করে। তাকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে। দিপা আমাকে জানিয়েছে গোপনে নাকি তার ভাসুর তাদের জায়গা উপর দিয়ে চলাচলের বিনিময়ে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছে।প্রায় দুই মাস ধরে দিপা তার ছেলেকে নিয়ে তার বাড়ীতে এক প্রকার গৃহবন্দি অবস্থায় আছে। বিষয়টি সমাধান হওয়া খুব জরুরী।
অভিযুক্ত বিনয় দাস বলেন, আমি কোন ধরনের অনৈকিত কু-প্রস্তাব দেয়নি। মূল ঘটনা হচ্ছে তাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য কোন জায়গা নেই। তারা আমার বাড়ীর জায়গার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। আমি শুরু থেকে বলছি আমার জায়গার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হলে আমাকে জায়গার মূল্য হিসাবে টাকা দিতে হবে, না হয় আমাকে সমপরিমান জায়গা দিতে হবে।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন দাস বলেন, পারিবারিক জায়গা জমি নিয়ে দিপা ও তার স্বামীর সাথে বিনয় দাসের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসচ্ছে। বিষয়টি দুই-এক দিনের মধ্যে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। দিপার ভাসুর এর কু-প্রস্তাব দিয়েছি কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মৌখিক ভাবে জানিয়েছে। যেহেতু বিষয়টির কোন প্রমান নাই তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
মোরেলগঞ্জ থানার এস আই উজ্জল কুমার মৈত্র বলেন , দিপা রায় নামের এক গৃহবধু আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। যেহেতু এটা পারিবারিক বিষয় সে কারনে সমাধানের জন্য ২০ দিনের সময় বেধে দেয়া হয়েছিলো। তবে যেহেতু ২০দিন পার হলেও বিষয়টি সমাধান হয়নি এখন বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। ঈদের পরে বসে বিষয়টির সমাধাণ করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত