কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নৃশংসতার তীব্র নিন্দা পাকিস্তানের
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪২ | আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৭
ভারতশাসিত কাশ্মিরে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একইসঙ্গে কাশ্মিরিদের প্রতি পাকিস্তানের অব্যাহত সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। শেহবাজ বলেছেন, কাশ্মিরি জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না এবং শেষ পর্যন্ত অধিকৃত এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ভোর আসবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বুধবার অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্রমাগত নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের কঠোর নিন্দা করেছেন এবং জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত কাশ্মিরিদের প্রতি পাকিস্তানের অটল রাজনৈতিক, নৈতিক এবং কূটনৈতিক সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের (এজেকে) ভিম্বারে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী কাশ্মির ইস্যুতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের অতুলনীয় অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কাশ্মিরি জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না এবং শেষ পর্যন্ত অধিকৃত এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ভোর আসবে। ভারতশাসিত কাশ্মিরের জনগণ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “অধিকৃত কাশ্মিরের জনগণ তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে এবং তাদের কাশ্মিরি ভাইয়েরা এখানে (আজাদ কাশ্মিরে) উচ্চ মানের শিক্ষা পাচ্ছে জেনে তারাও আনন্দও অনুভব করবে।”
অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেউলিয়া হওয়ার হুমকি এড়াতে সম্মিলিতভাবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো একদিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার হ্রাস করেছে অন্যদিকে রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের ক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে বলেও জানান তিনি।
শেহবাজ বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করার ওপরই পাকিস্তানের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করছে। এসময় তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মত্যাগের প্রশংসা করেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না বলেও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে, তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।
এছাড়া ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান - কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।
সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন - এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।
অন্যদিকে জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মিরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত। সেসময় জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত