কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চান্দিনার তিন গম্বুজ জামে মসজিদ 

  কুমিল্লা থেকে ওসমান গনি :

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৭ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৩৩

ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী তিন গুম্বুজ ওয়ালা জামে মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। কুমিল্লার জেলার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামের পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, অনাবীল সুখ-শান্তির সুশীতল পরিবেশে অবস্থিত মসজিদটি।

মসজিদটির ভিতর ও বাহিরে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্যে করা বিভিন্ন কারুকাজ। চীনা মাটির (সিরামিকের) প্লেট ভাঙ্গা দ্বারা বিভিন্ন ডিজাইনে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের চারপাশের ওয়ালগুলো ৩ ফুট পুরো। যার কারনে শীতকালে মসজিদের ভিতর গরম আর গরমকালে ঠান্ডা অনুভূতি হয়। পুরো মসজিদ চুন-শুড়কিতে তৈরি। ভিতরের মিম্বরটিতে রয়েছে সুনিপুঁণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। যে কেউ একবার দেখলে পরে মন ভরে যায়।

মসজিদের দেয়ালে নির্মাণ সন লেখা রয়েছে ১৩৩১ বাংলা ও ১৯২৫ ইংরেজি। তৎকালীন সময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারনে উপজেলার মহিচাইল গ্রামের জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ এর অনুমতিক্রমে মেহার গ্রামের তৎকালীন প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজী নজর মামুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

হাজী নজর মামুদের বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নাতি হাজী রমিজ বলেন, মসজিদটি নির্মাণ কাজের সময় জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিং হ হাতীতে চড়ে এসে নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। ভৈরব চন্দ্র সিংহ তখন একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। মসজিদটি নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ নামেই পরিচিত। সে সময়ে হাজী নজর মামুদ পায়ে হেঁটে মক্কা শরীফ গিয়ে হজ করেছেন। তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোন মসজিদ ছিল না। তাই তিনি এলাকার মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য নিজ উদ্যোগে ১০ শতাংশ জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন।

মসজিদটির সামনে তৈরি করে রেখেছেন মুসুল্লীদের বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা করার জন্য বসার স্থান। মসজিদটির দক্ষিণ পাশে মসজিদের মুসুল্লীদের অযুও গোসল করার জন্য তিনি ১২০ শতক জায়গায় একটি পুকুর খনন করে যান। যাতে রয়েছে পাকা ঘাট। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করে ভবিষ্যতে মসজিদ পরিচালনার জন্য, প্রতি রমজান মাসের কদরের রাতে মসজিদের মুসুল্লীদের খাবার ও মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জ্বিনের খরচসহ অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করার জন্য মসজিদের নামে ২৬৪ শতক জায়গা ওয়াকফ করে দিয়ে যান।

হাজী নজর মামুদের ২ ছেলে ছিল, আপ্তরদ্দী ও মিছির আলী। তার মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে মসজিদের সবধরনের দেখাশোনা করতেন। ছেলেদের মৃত্যুর পর তার ছেলের ঘরের নাতীরা মসজিদটি এখন দেখাশোনা করছেন। বর্তমান সময়ে এসে মসজিদের মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তার নাতীরা মসজিদের সামনের খালী জায়গাটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত করে  মুসুল্লীদের নামাজের জায়গা তৈরি করেন। তার পাঁচ নাতীর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। এখন ১ জন নাতী ও নাতীর ঘরের পৌতীরা মসজিদটি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত