কাউনিয়ায় ৯৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

  সারওয়ারা আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৭ |  আপডেট  : ৭ মে ২০২৪, ০৭:০৮

ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ৯৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো তৈরি হয়নি কোনো শহীদ মিনার। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস পালন করা হয় শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। আবার কোনো প্রতষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না। শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের উদাসীনতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল। কাউনিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হারাগাছ পৌর সভা সহ ৬টি ইউনিয়নের প্রাথমিক, ইবতেদায়ী ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রসা, কিন্ডার গর্টেন, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরী কলেজ মিলে মোট ২৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। মাদ্রাসার মধ্যে সোনাতন দাখিল মাদ্রাসা ছাড়া বাকি ১৬টি মাদ্রাসা, ১১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রসা, ৩৫টি কিন্ডার গর্টেন, ৬টি নি¤œমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল এর মধ্যে কিছু শহীদ মিনার নষ্ট হয়ে গেছে। ভাষা আন্দোলন ও দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ভাষা দিবসের সঠিক তাৎপর্য, ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক সহ স্থানীয়রা। তাঁরা জানান, উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, যে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে সে গুলো অযত্ন আর অবহেলোয় পড়ে থাকে। মানসম্মত একটি শহীদ মিনারও নেই উপজেলায়। একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই শহীদ মিনারে নতুন করে রং লাগানো ও পরিচ্ছন্নতা কাজ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহীদ মিনার নির্মাণ করতে মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের যে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সায়লা জেসমিন সাঈদ বলেন, এই উপজেলার ৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো প্রতিবছর সংস্কারের জন্য প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি। যে ২০টিতে শহীদ মিনার নেই সেগুলো দ্রুত নির্মানের ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ আরিফ মাহফুজ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশির নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ মিনার নির্মানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সভাপতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল হক বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোকে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে—সেই ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত