কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো বা বসানো হেফাজতের কাজ নয়: বাবুনগরী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৯ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৩ |  আপডেট  : ৬ মে ২০২৪, ০৯:৫৯

সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচিতে হেফাজতের নেতারা বারবার সরকার ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে সংগঠনটিকে। এর মধ্যে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠালেন হেফাজত প্রধান।

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, তাদের সংগঠন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো বা কাউকে ক্ষমতায় বসানো তাদের কাজ নয়।

গত মার্চ থেকে নানা কর্মসূচিতে সরকার ফেলে দেয়ার বিষয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ক্রমাগত বক্তব্যের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে এই বিবৃতি দেন বাবুনগরী।

সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বাবুনগরী আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপ্রিয় এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে। কিন্তু হামলা-মামলা ও দমন-পীড়ন চালিয়ে কখনই সহিংসতা রোধ করা সম্ভব নয়।’

গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনায় হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্যথায় আলেম-ওলামার সঙ্গে বাড়াবাড়ির কারণে সরকার নিঃসন্দেহে জনগণের কাছে আরও ঘৃণিত ও নিন্দিত হবে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে হেফাজত দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে।

সফরের আগের দিন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ঢাকায় এক সমাবেশে মোদি ঢাকায় এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরির সতর্কতা দেন। আর সফরের দিন ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ত্রাস তৈরি করে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।

তারা সেদিন হাটহাজারীতে সরকারি ডাক বাংলো, এসিল্যান্ড অফিস ও থানায় আক্রমণ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জ্বালিয়ে দেয়া হয় রেল স্টেশন, হামলা হয় পানি উন্নয়ন রোর্ড, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে।

দুই দিন পর হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। হামলা হয় শহরে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ভাঙচুর করেও আগুন দেয়া হয়।

একই দিন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জেরও ব্যাপক সহিংসতা করে হেফাজত কর্মীরা।

গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিতে সেখানে তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা। আক্রমণ হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাড়িঘরে।

একই দিন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, সুনামগঞ্জের ছাতকেও আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করে হেফাজত কর্মীরা।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল হেফাজতকে সতর্ক করে দেন। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় মামুনুলসহ হেফাজতের ১৭ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের তাণ্ডবে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্পষ্টতই, সরকার হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পছন্দ করছে না।

বাবুনগরীর বিবৃতিতে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ ১৭ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ উল্লেখ করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

বাবুনগরী বলেন, ‘বিগত ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নিরীহ শান্তিপ্রিয় মুসল্লিদের ওপর পুলিশের সহযোগী হেলমেট পরিহিত ও চাপাতি-রামদা হাতে একদল সন্ত্রাসী বিনা উসকানিতে আক্রমণ চালায়। পাশাপাশি পুলিশও মুসল্লিদের ওপর গুলি চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মুসল্লিরা আত্মরক্ষার্থে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলেন।’

তিনি বলেন, ‘সেদিনের সংঘাতের ভিডিওগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে কারা সহিংসতা উসকে দিয়েছিল। সারা দেশের মানুষ ওই ভিডিওগুলো দেখেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সেদিনের ঘটনা কভারেজ পেয়েছিল। সেদিন হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি ছিল না।

‘সুতরাং নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হেফাজতের ১৭ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।’

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জানানো জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার হরণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কোনো বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির প্ররোচনায় কোনো ধরনের আত্মঘাতী ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকতে বিবৃতিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত