ওনারা কি পদ্মা সেতু উনাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বানিয়েছেন: মির্জা ফখরুল

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২২, ২০:৩৪ |  আপডেট  : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৩

দেশের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশও বিপদে পড়তে পারে।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন ফখরুল। গত সোমবার (১৬ মে) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি অশনিসংকেত। অদূর ভবিষ্যতে দেশ নিয়ে আমরা শ্রীলঙ্কার মতো বিপদে পড়তে পারি, সেই আশঙ্কা আছে এবং সেই আশঙ্কা বাস্তবভিত্তিকই বলা যেতে পারে।’

পদ্মা সেতুতে বিএনপির লোকজন ক্ষমা চেয়ে চলাচল করতে পারবেন- তথ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওনারা কি ওইটা (পদ্মা সেতু) উনাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বানিয়েছেন, নাকি আমাদের সবার পকেটের টাকা দিয়ে বানিয়েছেন? আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়েছেন এবং ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন চুরি করে। কাজেই এই সমস্ত কথাবার্তা তাদের মুখে শোভা পায় না।’ 

পদ্মা সেতুর টোল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা এখনো খুব বেশি স্টাডি করিনি। তবে, আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, পদ্মা সেতুতে টোল অত্যন্ত বেশি ধরা হয়েছে। এতে করে যাঁরা আগে যাতায়াত করবেন, তাদের আগে যে ব্যয় হতো তার থেকে আরও বেশি ব্যয় হবে। যমুনা সেতুর চেয়েও আনুপাতিক বেশি হারে টোল ধরা হয়েছে।’

অনির্বাচিত সরকার পতনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং সব কিছু জানতে পারবেন, যখন আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক যে অবস্থা আমি মনে করি, এটা অ্যালার্মিং অর্থ্যাৎ অশনিসংকেত। অদূর ভবিষ্যতে আমরা শ্রীলঙ্কার মতো একটা বিপদে পড়তে পারি। সেই আশঙ্কা আছে এবং সেই আশঙ্কাকে বাস্তবভিত্তিক বলা যেতে পারে।’

ফখরুল বলেন, ‘যে সরকারের একমাত্র লক্ষ্য থাকে লুট করা এবং জনগণের সম্পদ থেকে পুরোপুরি নিজেদের পকেটে ভরা, সেই সরকার সরলেই দেশের অনেক পরিবর্তন হবে এবং ভালোভাবে পরিবর্তন হবে, যখন জনগণের প্রতিনিধিরা আসবেন। জবাবদিহিতা থাকবে এবং অনেক ভালো হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী। আগামীতে তাদের জনগণের অর্থ লুটের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশকে রক্ষার জন্য মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এ মুহূর্তে সার্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এ সরকারকে হঠানোর কোন বিকল্প নেই।’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়-ব্যয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্যাটেলাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের নিয়োগ না দিয়ে দলবাজ কিংবা শীর্ষ নেতৃত্বের স্বজনতোষণের ফলে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফেল করেছে। যা দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ফখরুল জানান, ‘সভায় স্যাটেলাইট-১ গত ৪ বছরেও কোনো অর্থ আয় করতে না পারার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, কেবলমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও উন্নয়নের ডামাডোল বাজাতেই এ ধরনের অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণ করে দেশকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট-১ তৈরি এবং উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।’

বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সকলের মনে আছে, উৎক্ষেপণের সময় বলা হয়েছিল, পরবর্তী সাত বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে এই অর্থ তুলে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের চার বছর পূর্তিতে এসে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘চার বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছরে আমরা নানা কারণে কোনো আয় করতে পারিনি। কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা আয় করতে শুরু করছি।’

সম্প্রতি বিটিআরসি’র এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘সাম্প্রতিক প্রেস স্টেটমেন্ট এ বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ৩০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে ডোমেস্টিক সোর্স থেকে। সব চেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারটি ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য এখন তারা দেশের ভেতরে নতুন বাজার মানে কাজের ক্ষেত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে’।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘স্যাটেলাইটের যখন এই হতাশার চিত্র তখন নতুন করে আর একটি স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। শ্বেত-হস্তী রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পটি আর্থিকভাবে অলাভজনক ও বিপদজনক হওয়া সত্ত্বেও নতুন করে দক্ষিণবঙ্গে আর একটি আণবিক প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত