ওজোন স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৫৮ | আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪
ওজোন স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করলেও বায়ুদূষণ কমানোর মাধ্যমে ওজোন স্তর পুনর্গঠনে সহায়ক হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে, বায়ুমন্ডলীয় ওজোনক্ষয়কারী মানবসৃষ্ট দ্রব্যগুলোর উৎপাদন ও ব্যবহার রোধ এবং সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক বিকল্প প্রযুক্তির সন্নিবেশ করলেই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই, ব্যাপকহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বনায়ন, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ সর্বোপরি মন্ট্রিল প্রটোকলের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওজোন স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২১ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে একথা বলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও কাল বিশ্ব ওজোন দিবস-পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ওজোন স্তর সূর্য থেকে নিঃসরিত অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে মানবদেহে চর্ম-ক্যান্সার, চোখের ছানিসহ অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, শষ্য ও বাস্তুসংস্থানকে বিবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। বায়ুমন্ডলের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তর সুরক্ষার জন্য ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশন এবং এর আওতায় ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। ফলে বিগত ৩৬ বছরে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওজোন স্তর ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হতে শুরু করেছে এবং সূর্যালোক মানুষসহ পৃথিবীর সকল জীবের জন্য নিরাপদ হচ্ছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ওজোন দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে ওজোন স্তর রক্ষা করি, নিরাপদ খাদ্য ও প্রতিষেধকের জন্য শীতল বিশ্ব গড়ি’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০, বিপজ্জনক জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১ এবং ২০১৪ সালে একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছি। জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছি।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন এ্যাডাপটেসান (জিসিএ) এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস চালু করা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে কোন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে এনে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশব্যাপী বনায়ন ও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তার সরকার মন্ট্রিল প্রটোকল যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। ১৯৯৭ সালে বায়ু দূষণ ও ওজোনস্তর ক্ষতিকারক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার রোধে বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণ করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা সরকার গঠনের ফলে আমরা ওজোন স্তর পুনর্গঠনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলছি। আমরা ইতোমধ্যে দেশে এইচসিএফসি সহ অধিকাংশ ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি, ২০০৯ সালে আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি এবং ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ বা ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য অর্থ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে অভিযোজনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনীতে অনুস্বাক্ষর করে এইচএফসি ব্যবহার হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মন্ট্রিল প্রটোকল সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও ওজোন সচিবালয় ২০১২, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে প্রশংসামূলক সনদপত্র প্রদান করেছে, যা আমাদের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং অনুপ্রেরণা। তিনি ‘বিশ্ব ওজোন দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত