এ মাসেই আসতে পারে হজের সবুজ সংকেত
প্রকাশ: ৪ মার্চ ২০২২, ১০:২৪ | আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০১
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর ধরে বিদেশিদের হজ পালনের অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব। এবারও বিদেশিরা হজ পালনের সুযোগ পাবেন কি না সে বিষয়ে খোলাসা করছে না তারা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৯ মার্চ সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘হজ এবং ওমরাহ সম্মেলন ও মেলা’। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
হজ মেলায় অংশ নিতে আগামী ১৭ মার্চ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে সৌদি আরব যাচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেখানে হজের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ অনুষ্ঠান কীভাবে সম্পন্ন করলে সবার জন্য মঙ্গল হবে সে ব্যাপারে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য সেখান থেকে আসতে পারে হজের সবুজ সংকেত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গতকাল বলেন, ‘হজের বিষয়টি সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তারা বিদেশিদের অনুমতি দেবে কি না, দিলে কতজনকে দেবে, কী কী বিধিনিষেধ থাকবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। আগামী ১৯ মার্চ সৌদি আরবে পাঁচ দিনব্যাপী হজ-ওমরাহ সম্মেলন ও মেলা হবে। সেখানে আমরাও যাব। সেখানে হজের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। সৌদি সরকারের সঙ্গে হজচুক্তি ছাড়া বিস্তারিত কোনো ঘোষণা দেওয়া সম্ভব নয়।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত হজ মৌসুমের প্রায় ৭/৮ মাস আগেই হজের বিষয়ে নানা উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়সহ হজ-সংশ্লিষ্টরা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর হজের কার্যক্রম বন্ধই রয়েছে। বর্তমানে টিকা কার্যক্রমের কারণে বিশ্বে করোনার প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকারও ওমরাহর জন্য মক্কার বায়তুল্লাহ শরিফ খুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মদিনার মসজিদে নববীও জিয়ারত করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এমতাবস্থায় হজের মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না সৌদি সরকার। ফলে এবারও বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রায় কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। হজযাত্রীদের প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় গত নভেম্বরেই হজের প্রস্তুতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা, এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করেছে, যেন সৌদি আরব অল্প সময়ের নোটিসে হজের অনুমতি দিলেও হজযাত্রী পাঠানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা যায়। হজের বিষয়ে সৌদি সরকারের কোনো তথ্য আছে কি না-জানতে চাইলে জেদ্দা হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো আপডেট তথ্য নেই।’
এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘সৌদি আরবের থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই। তবে সৌদি ঘোষণা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে এজেন্সিগুলোর।’ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ৭ থেকে ১২ জুলাই হজ অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিক সময় প্রতিবছর হজের ৮ মাস আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের হজচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসেই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জেদ্দার হজ মেলায় মূলত সৌদি সরকার মুসলিম দেশ এবং বেশিসংখ্যক হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর করোনা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় আলোচনা করে সীমিত, নাকি স্বাভাবিকভাবে হজ অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে মতামত নিতে পারে। এর পরই মূলত সৌদি সরকার হজের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটা অনুযায়ী সীমিতসংখ্যক হজযাত্রীকে হজ পালনের সুযোগ দিতে পারে সৌদি সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ তাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলেই সে অনুযায়ী সৌদি সরকারের সঙ্গে হজচুক্তি করবে বাংলাদেশ। এরপর মন্ত্রিসভায় হজ প্যাকেজ অনুমোদন করে ঘোষণা করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
প্রসঙ্গত, গত বছর সৌদিতে অবস্থানরত ৬০ হাজার দেশি-বিদেশি মানুষকে হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর আগের বছর ২০২০ সালে শুধু ১০ হাজার সৌদি নাগরিককে হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের হজের জন্য চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নিবন্ধন করলেও কোনো হজযাত্রী করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞার কারণে হজে যেতে পারেননি। তবে হজ এজেন্সিগুলো আশা করছে, সীমিতসংখ্যক হলেও বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আগামী রমজান মাসের মধ্যে সৌদি সরকারের কোনো ঘোষণা আসতে পারে। তখনই নিবন্ধন, প্যাকেজ ঘোষণা, ফ্লাইট শিডিউল ঠিক হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত