উড়ে এসে জুড়ে বসারা অর্থ-সম্পদ বানানোর একটা মেশিন হিসাবে পায়: প্রধানমন্ত্রী

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:০১ |  আপডেট  : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৬

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখন দেশের ক্ষমতায় আসে তখন উন্নতি হয়। উড়ে এসে জুড়ে বসারা ক্ষমতাটাকে ভোগের জায়গা বানায়। অর্থ-সম্পদ বানানোর একটা মেশিন হিসাবে পায়। আমরা যখন সরকারে আসি তখন আন্তরিকতা, আদর্শ, নীতি ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কারণ এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা, পাশে থেকেছে জনগণ। কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে যারা ক্ষমতায় বসে, তাদের সেই দায়বদ্ধতা থাকে না। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনও খেয়ালই থাকে না। এটা হলো বাস্তবতা।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা যখন শুরু হলো। তখন থেকে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করতো দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে চেষ্টা করেছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছিলো, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি অফিস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ৬টি ভূমি অফিসসহ অনেকগুলো অফিস তারা নষ্ট করে দেয়। তখন একটা ঘোষণা করেছিলাম যে, যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে তাদের যেন আর কোনোদিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই মালিকানা কেন পাবে? এই হুমকি দেওয়ার পরে তাদের ভূমি পোড়ানো বন্ধ হয়। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি।

তিনি বলেন, বিএনপি সামরিক শাসকের হাতে তৈরি করা একটা সংগঠন। তাই মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি তাদের কোনও দায়িত্ববোধও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বানানো, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি তাদের কাজ। সেটাই তারা করেছে। 

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর ভূমি সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, স্বাধীনতার পরে কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেন। ভূমিকর মওকুফ করেন। সেই সঙ্গে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। তিনি আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যে, একজন মানুষের নামে সর্বোচ্চ কতটুকু জমি থাকবে। ১০০ বিঘা পর্যন্ত একটা সিলিংও তিনি করে দিয়েছিলেন। তাঁর একটি লক্ষ ছিল দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ আমাদের করতে হবে। 

শেখ হাসিনা আরও বলেন, নগরায়ন যদি সুপরিকল্পিত হয়, তাহলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন শুরু হয়, ঠিক পরিকল্পনামাফিক হয় না। নগরায়নের চাপে আমরা কৃষি জমি হারাই, বনায়ন ধ্বংস ও পরিবেশ নষ্ট হয়; এটা খুব স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। আমরা সরকারে আসার পর প্রচেষ্টাই ছিল ভূমি ব্যবহার, উন্নয়ন এবং ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। কৃষি জমি রক্ষা করা। মানুষের বসতিটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটি নীতিমালা প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কতগুলো পদক্ষেপও গ্রহণ করি। 

এসময় হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে চাই। সারাদেশের ভূমি অফিসগুলোর যে জীর্ণ দশা, আমাদের আগে তো অনেকই ক্ষমতায় ছিল; কেন এগুলো সংস্কার করেনি এটা বড় প্রশ্ন। দেশে ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরাই সেটা করি। মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন আমরা ‘ফোর জি’ চালু করেছি। ফাইভ জিও চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না, মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক কাজ সহজে করতে পারেন। ট্যাক্স, খাজনা দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ভূমি মালিক এখন অফিসে না গিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর দিতে পারেন। 

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ৩ কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে ১ কোটির ডাটা এন্ট্রি ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। তা শেষ হলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। যাতে সময় ও খরচ বাঁচবে। এ ছাড়া হয়রানি থেকেও মানুষ রক্ষা পাবেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জলমহল, হাওর, বাঁওড়, চা বাগান, লবণ মহল, চিংড়ি মহল, হাটবাজার, খাস জমি ও অধিগ্রহণকৃত জমির ডাটাবেজ ছিল না। সেটা না থাকার কারণে তথ্য পেতে দীর্ঘসময় লাগে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভূমি নিয়ে। এই ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে, কীভাবে হবে, অধিগ্রহণ করা, তার মালিকানা খোঁজা এবং তাদেরকে অর্থ পরিশোধ করা; এটা অনেক ঝামেলা। এখন ডিজিটালাইজ হওয়াতে সুবিধা হয়েছে। 

দেশের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের চাষ উপযোগী ভূমি রক্ষার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, যেখানে শিল্পায়ন হবে। যার মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বাড়বে রপ্তানি। সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা ক্ষতি করেছে। শুধু আমরা নয়, সারা পৃথিবীতেই এই সমস্যা হয়েছে। তার মাঝেও আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা অব্যাহত আছে। আমরা থেমে যাবো না। এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।  

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত