ইভিএম- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হলেও এটি দিয়ে জালিয়াতির সুযোগ রয়েছে: সুজন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৬ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৯

ইভিএম- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হলেও এটি দিয়ে জালিয়াতির সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সে সঙ্গে ইভিএম ওভার রাইট করার ক্ষমতা ও অডিট কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতির সুযোগসহ ৯টি কারিগরী ক্রুটির কথা জানিয়েছে এই সংগঠনটি। 

সুজন বলছে, এসব ত্রুটি দূর না করে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত  একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য হতে পারে। 

এছাড়া ইসির সংলাপে বেশিরভাগ দলের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলেও মনে করে সুজন। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। 

সেই সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ছাড়া বাকি ২৩টি দল ইভিএমের বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানায়। এরপরই ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইসি।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সুজন আয়োজিত ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভোট গ্রহণে মেশিনটির ৯টি ক্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরা হয়। এ সময় ইভিএমের কারিগরি দিক পর্যালোচনা ও নির্বাচনে এর প্রভাব বিষয়ে প্রবন্ধ পড়ে শোনান প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

এতে ইভিএমের চ্যালেঞ্জ, অভিযোগ এবং সমস্যা সংক্রান্ত নয়টি বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, এ যন্ত্রে ইন্টিগ্রেটেড রেজাল্ট তৈরির সুযোগ নেই। ভোট ডিজিটালি হলেও ফল তৈরি হয় ম্যানুয়ালি।

সভায় বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন বলছে ইভিএমে কেউ কারসাজি করা যাবে না। তবে এটা সুস্পষ্ট নির্বাচনের কমিশনের কেউ চাইলেই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতার পরও এভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্ত কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য হতে পারে।

বদিউল আলম বলেন, কথার কথা- ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হলো। একটি দলকে তারা ১৪০টি আসন দিয়ে দিলো। পেপারে লিখিত না থাকলে এটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। কুমিল্লায় এভাবেই হয়েছে। যাচাই-বাছাই করার আর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কমিশনার যেন দেখতেও পান না, শুনতেও পান না। এর মানে তারা অন্ধ ও কালা। তারা কী উদ্দেশে ইভিএম করছে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

ইভিএম ক্রয়ে বিপুল অর্থের ব্যয়ের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে মন্তব্য করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘ইভিএম ক্রয়ে হাফ বিলিয়ন ডলার ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

সুজন বলছে, বাংলাদেশে এখনো নিখুঁত এনআইডি এবং বায়োমেট্রিক তথ্যশালা তৈরি হয়নি। একটি কেন্দ্রের সব বুথের মাস্টার ডেটাবেসও নেই। 

এছাড়া কর্মকর্তাদের মেশিন ওভাররাইট করার ক্ষমতা দেয়াসহ কারিগরি ত্রুটিগুলো দূর না করে ইভিএম ব্যবহার করা হলে নির্বাচন আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

প্রযুক্তিবিদ ফয়েজ বলেন, ইভিএম মেশিন হ্যাং ও বায়োমেট্রিক শণাক্তে ত্রুটির জন্য বুথে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। বুথে মাস্টার ডাটাবেজ না থাকায় অন্য ইভিএমে ভোট দেয়া যায় না। 

কর্মকর্তাদের ইভিএম ওভার রাইট করার ক্ষমতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ভোটার অনুপস্থিত থাকলেও নির্বাচিত কর্মকর্তারা ওভার রাইট ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এটা অনধিকার চর্চা। ইন্টারনেট সংযুক্ত না থাকলেও ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব এই দাবিটিও সত্য নয়।

সভায় ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ইভিএমের কারিগরি ত্রুটি ও ম্যান্যুয়াল ফলাফলের অসঙ্গতিগুলোরও সমালোচনা করেন বক্তারা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত