ইতালী যাবার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবক নিহত, নিখোঁজ আরো একজন  

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৭ |  আপডেট  : ৮ মে ২০২৪, ০৯:২৪

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাবার সময় মাদারীপুরের তিন যুবক নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে আরো একজন। পরিবারের কাছে এই তিন যুবকদের মৃত্যুর খবর আসলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এই ঘটনায় দালালের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। আদরের সন্তান আর কোনদিন ঘরে ফিরবে না, এই শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। আজাহারীতে ভাড়ী চারপাশের পরিবেশ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো.সম্প্রাট (২৪) ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারি দিয়েছিল ইতালির পথে। মাস পাঁচেক আগে রাসেদ খান নামে এক দালালের সাথে চুক্তি হয় ইতালি পৌছে দেয়ার। এসময় দালাল সম্রাটের পরিবারের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নেয়। এরপর লিবিয়ার একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখে। চালানো হয় নির্যাতন। ঠিকমত খাবারও দেয়া হতো না। এরপর হঠাৎ করেই খবর আসে সম্রাট মারা গেছে। 
সম্রাটের ভাই আজগর বলেন, কতগুলো টাকা খরচ করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই নাই। সে মারাগেছে। এখন টাকাও গেলো ভাইও গেলো। দালাল বলছে লাশ এনে দিবে। 

অনুসন্ধানে জানাগেছে, দালাল রাসেদ খান ও তার ভাই টুলু মাদারীপুরের বিভিন্ন সহজ সরল মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে। তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে একাধিক মামলা রয়েছে। জানাগেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগীসহ (২৫) বেশ কয়েকজন যুবক ইতালীর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে গত বুধবার লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওয়ানা দেয় তারা। ৩২ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৫২জন অভিবাসন প্রত্যাসীকে নিয়ে ইতালী যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভুমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ মারা যায় ১২ জন। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। এছাড়া এখনো নিখোঁজ পার্শ্ববর্তী গোহালা ইউনিয়নের পান্নু শেখের ছেলে আপন শেখ।

নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ ও নিহত সজল বৈরাগীর পিতা সুনীল বৈরাগী জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয় ১৩-১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালী পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা। সরকারীভাবে তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। 

এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত দালাল মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছে। তার ছেলে যুবরাজ গ্রাম থেকে ইতালী পাঠানোর জন্য যুবকদের সংগ্রহ করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজৈর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচএম সালাহউদ্দিন বলেন, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। মামলা হলে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করে। কিন্তু পরে আবার বাদীদের সাথে আপন মিমাংসা করে ছাড়া পেয়ে যায়।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত