ইজতেমার প্রস্তুতি বিষয়ক সভায় হতাশা প্রকাশ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ |  আপডেট  : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৫০

হজের পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে প্রতিবছর এই সম্মেলনে যোগ দেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কয়েক বছর আগে দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এই সম্মেলন। যা নিয়ে আক্ষেপ করলেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে এই ইজতেমা অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সারা বিশ্ব থেকে এখানে লোক আসতো। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। আমরা বহু জায়গায় আপনাদের পাঠিয়েছি। আপনাদের মনোভাবটা পরিবর্তন হয়নি। সেজন্য আমরা কষ্ট পাই।’

সোমাবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন মাঠে বিশ্ব ইজতেমা প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় এমন আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী ও মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে তারা টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমাও আলাদাভাবে করে আসছেন। এবছরও দুপক্ষ দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করছে। প্রথম পর্বে আগামী ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার আয়োজন করছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের আয়োজনে।

ইজতেমার প্রস্তুতি বিষয়ে পর্যালোচনা করতে মাঠে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে সঙ্গে নিয়ে দুপক্ষের সঙ্গে ‘ফলোআপে’ বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ আবদুল্লাহ আল-মামুন, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি মেয়র জায়েদা খাতুনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল মন্ত্রণালয়, সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দফতরের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

ইজতেমার প্রস্তুতি চলাকালেই গত রবিবার রাতে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের তাকওয়া মসজিদে জোবায়েরপন্থিদের সঙ্গে সাদপন্থিদের আট জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। প্রথম পর্বের আয়োজনে  টঙ্গীর তুরাগতীরে মূল মঞ্চ ছাড়াও দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের উত্তরা ২ নম্বর স্টেশনের পাশে বউবাজার সংলগ্ন মাঠে আরেকটি মঞ্চ তৈরি করছেন জুবায়েরপন্থিরা। এরই মধ্যে সেখানে শামিয়ানা টানানো শুরু হয়েছে। চলছে অস্থায়ী শৌচাগার, গোসল ও অজুখানা নির্মাণের কাজও। আনুষ্ঠানিক অনুমতি না দিলেও আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

দুপক্ষের বিবাদের প্রসঙ্গ টেনেই পর্যালোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, আপনারা মিলেমিশে আবার যদি এক প্লেটে খেতে পারতেন; আর আমরা যদি তা দেখে যেতে পারতাম, তা হলে খুব খুশি হতাম। দুই গ্রুপকে যদি আপনারা মিলিয়ে নিতে পারেন, আমরা খুশি হবো। এই মেলানোর দায়িত্বটা ধর্মমন্ত্রীকে দিলাম।‘

এবারের ইজতেমায় মাঠ হস্তান্তরের বিষয়ে প্রথম পর্বের আয়োজকদের (জুবায়েরপন্থি) উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথমে সুযোগ করে দেই। সে দাবি রক্ষা করে সম্মানের সঙ্গে মাঠ বুঝিয়ে দেবেন। যাতে কোনও প্রকার ভাঙচুর না হয়, কেউ যাতে কোনও অভিযোগ না করে, এটা আমার অনুরোধ। আমরা গতবারও শুনেছি ভাঙচুর হয়েছে, কিছু জিনিস খোয়া গেছে। আমরা চাই সুন্দরভাবে মাঠটা বুঝিয়ে দেবেন। এ ছাড়া গোয়েন্দাবাহিনীর অনুরোধ রয়েছে, দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা না বাড়িয়ে সকাল থেকেই মাঠটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন ‘

সবাইকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রবিবার কিছু ঘটনা ঘটছে; যা দুঃখজনক। সবার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ রইলো এসব ঘটনা আর ঘটাবেন না, আপনারা সবাই মিলেমিশে চলবেন এবং মিলেমিশে চলার শিক্ষা দেবেন।’ 

ইজতেমায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি নিজে ‘লজ্জিত’ মন্তব্য করেন। তাবলিগের মুরুব্বিদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যা বলেন, সে অনুযায়ী যদি কাজ হয় তাহলে তো কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। আমি মনে করি, আপনাদের আচরণে এমন ভুল আর হবে না যাতে অন্যরা কষ্ট পায়।’ এসময় তিনি মুসল্লিদের জন্য দুর্ভোগ কমাতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ভোগড়া বাইপাস ৩০০ ফুটের রাস্তা কাজ বন্ধ রেখে যান চলাচল চালুর কথাও বলেন।

ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘অতীতের ভুলগুলো খেয়ালে আনতে হবে। ইজতেমায় দুই গ্রুপ হওয়ায় অসঙ্গতি হচ্ছে। দুই গ্রুপের বিভেদ দুঃখজনক।’

এসময় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শুনেছি একপক্ষ যখন আরেক পক্ষকে মাঠ বুঝিয়ে দেন, তারা মাঠের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেন। আমরা আদব, লেহাজ, তমিজ আপনাদের কাছ থেকে শিখবো। তাবলিগে যারা আছেন এটা তাদের কাছ থেকে শিখেছি। কিন্তু গত রাতেও এখানে আপনাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদের কাছ থেকে কী শিখবো? আমরা আপনাদের সহযোগিতায় বিশ্ব ইজতেমায় চমৎকার একটি পরিবেশ দেখতে চাই।’

বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিয়াবাড়ি এলাকায় একটা মঞ্চ করবেন বলেছিলেন, কিন্তু আপনারা মঞ্চও করে ফেলেছেন। এটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, আপনারা ভবিয্যতে যৌথভাবে কাজ করবেন।’

সভায় উপস্থিত প্রথম পর্বের আয়োজকদের প্রতিনিধি খন্দকার মেজবাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই বাংলাদেশের ইজতেমা মানুষের রক্তের সঙ্গে, মনের সঙ্গে মিশে গেছে।’ প্রথম পর্বের পর মাঠ হস্তান্তরের সময় কোনও সমস্যা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

প্রথম পর্বের ইজতেমা ৪ ফেব্রুয়ারি [রবিবার] শেষ হবে। এর পরদিন সোমবার [৫ ফেব্রুয়ারি] বা মঙ্গলবার [৬ ফেব্রুয়ারি] বাদ মাগরিব মাঠ হস্তান্তরের অনুরোধ জানান দ্বিতীয় পর্বের প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। তিনি গত রবিবার [২১ জানুয়ারি] সংঘর্ষ প্রসঙ্গেও আলাপ তোলেন। অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রথম পর্বের লোকজন উত্তরায় আমাদের একজনকে মারধর করেছে। সে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।’ 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমানের পরিচালনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক [ডিসি] আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের [ডিএমপি] কমিশনার হাবিবুর রহমান ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের [জিএমপি] কমিশনার মো. মাহবুব আলম বক্তব্য দেন।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত