আদমদীঘির রক্তদহ বিল ফকির বিদ্রোহের ইতিহাস

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৫৫ |  আপডেট  : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০৩

ইতিহাসের এক নক্ষত্র নাম ফকির মজনু শাহ। বগুড়ার আদমদীঘির ঐতিহাসিক সুপরিচিত রক্তদহ বিলের রয়েছে তার স্মৃতি। ফকির মজনু শাহ এখান থেকে তার যোদ্ধা সঙ্গীদের নিয়ে প্রায় প্রতি বছর তৎকালিন এস্টইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে থাকা বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। ইংরেজ বাহিনী ও বিদ্রোহীদের দমনের জন্য এই এলাকায় নির্মম সামরিক অভিযান চালাতেন। তাই মজনু শাহের সৈনিকদের রক্তে রঞ্জিত এই রক্তদহ বিল। এই বিলের সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে পলাশী পরবর্তী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। একজন ইতিহাস সচেতন মানুষ এখানে বেড়াতে এসে নস্টালজিয়ায় ভোগেন তিনি ফিরে যান নবাব সিরাজের সময়ে। অনুভব করেন ব্রিটিশ বিরোধী সেই যোদ্ধাদের রক্তস্মৃতির কথা।

প্রাপ্ত অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই বিলের আগে নাম ছিল ‘বিল ভোমরা’। ১৭৮৬ সালে একটি যুদ্ধে মজনু শাহ ও ইংরেজ সৈনদের প্রচুর লোক হতাহত হয়। বিল ভোমরার পানি নিহত যোদ্ধাদের রক্তের কারনে লাল রং ধারন করে। সেই রক্তের রঙ্গেই বিলটির নাম হয়ে গেছে রক্তদহ বিল। রক্তদহ বিলে ফকির বাহিনীর একজন শীর্ষ যোদ্ধার কবর রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা গেছে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলকে হত্যা করার পর ইংরেজরা এই বাংলার রাজ ক্ষমতা অধিকারী হয়ে বসে। প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, সিরাজের খালা ঘষেটি বেগম, ব্যবস্থায়ী জগৎশেট, নবাব সিরাজের খালাতো ভাই শওকত জং এবং রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা উমিচাদ ইংরেজদের পক্ষ নেওয়ায় পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন হয়। স্বাধীনতা হারিয়ে বাঙ্গালী হতভম্ভ হয়ে পরেন। পলাশী পরবর্তী সময়ে যে কয়জন মানুষ ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দারান তাদেরই মধ্যে ফকির মজনু শাহ একজন। ফকির মজনু শাহ তার অস্ত্রধারী সহস্র সহচর নিয়ে রক্তদহ বিল থেকেই তৎকালিন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকার ভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। তার অভিযানের অঞ্চল ছিল প্রধানত বিহারের পানিয়া এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুচবিহার, জলপাইকড়ি ও মালদা জেলা। রক্তদহ বিলের মাঝে যে মাজারটি রয়েছে স্থানীয়ভাবে সেটি ‘কুঁচমুড়ি দর্গা’ নামে পরিচিত। এই দর্গাতে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ নৌকা ও যান বাহন যোগে মানত ও জিয়ারত করতে আসেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বিলটি রক্ষা করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয়রা। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত