আদমদীঘির রক্তদহ বিল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী  

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৪৮ |  আপডেট  : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪৬

পলাশীর যুদ্ধে মুসলমানরা বিপন্ন হয়ে পড়লে মীর জাফর, উমিচাদ, জগৎশেঠ,রায়দুলভ এর মত কতিপয় র্স্বাথান্ধ দেশদ্রোহীর সহযোগীতায় ইংরেজরা এ দেশের রাজ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসল। দেশবাসী এতে করে সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে পড়লেও তাদের আত্নসদ্বিত ফিরে আসতে দেরী হলো না। ফলে কিছু দিলের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম প্রথম যুগের সেইস্বাধীনতা সংগ্রামে যে সব বীর যোদ্ধা সম্মুখ সারিতে ছিলেন ফকির মজনু শাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৭৫৭ খৃষ্ঠাব্দে পলাশীর তথাকথিত যুদ্ধের মাত্র ছয় বছর পরে ১৭৬৩ খৃষ্ঠাব্দে এই ফকির নেতা সর্বপ্রথম সংগ্রামের ক্ষেত্রে অবর্তীণ হন এবং উনবিংশ শতকের প্রথম  কয়েক বছর পর্যন্ত ফকিরদের এই সংগ্রাম অনেকটা অব্যাহত ভাবেই চলতে থাকে। মজনু শাহ গোয়ালির রাজ্যের (বর্তমান ভারত) মেওয়াতে এলাকায় জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমান ভারতের কানপুর থেকে চল্লিশ মাইল দূরে বাস করতেন। এখান থেকেই তিনি শত সশস্ত্র অনুচর সহ প্রায় প্রতি বর্ষেই তৎকালীন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধিকার ভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। তাঁর কার্যক্ষেত্র প্রধানত বর্তমান ভারতের বিহারের পানিয়া অ ল, কোচবিহার,জলপাইকুড়ি,মালদহ এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলায় বিস্তৃত ছিল।

এ ছাড়াও  তিনি ঢাকা, সিলেট নিম্ন বঙ্গের কোন কোন জায়গাও অভিযান পরিচালনা করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়। প্রকৃত পক্ষে এদেশে বৃটিশ শাসনের প্রথম যুগে তৎকালীন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ইংরেজী বনিকের দল এবং তাদের সহায়ক জমিদার মহাজনের মধ্যে শাহের আন্দোলন সম সমায়িক কালের ইতিহাসে ’ফকির বিদ্রোহ’ নামে পরিচালিত। বগুড়ার মহাস্থানে ফকির নেতা মজনু শাহর আস্তানা বা প্রধান ঘাঁটি ছিল। ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে এখানে তিনি একটি দুর্গ নির্মান করেছিলেন। এখান থেকে এতদ এলাকার বিভিন্ন স্থানে তিনি অভিযান পরিচালনা করেছেন। তার মধ্যে বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার অভিযান গুলো ছিল উল্লেখ যোগ্য। ১৭৮৬ খৃষ্ঠাব্দের আগষ্ট মাসে বগুড়া হতে ৩৫ মাইল দুরবর্তী এক স্থানে লেফটেন্যান্ট আইন শাইনের সাথে তার সংঘর্ষ হয়েছিল, গবেষনায় দেখা গেছে যে,এই স্থানটি ছিল আদমদীঘি থানার রক্তদহ বিল। এখানে ব্যাপক ইংরেজ সৈন্য হতাহত হয়েছিল এবং রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বলে সে সময় এর নাম রাখা হয় রক্তদহ বিল। রক্তদহের বিলে ফকির বাহিনীর একজন শাহাদত প্রাপ্ত মুজাহিদ চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর মাজারের চারিদিকে ডুবলেও এই মাজারে পানি ওঠেনা। ফকির মজনু শাহ মূলতঃ এই এলাকায় আন্দোলন করেছিলেন ইংরেজ ও তাদের দোসর জুমিদারের অত্যাচার থেকে সাধারন মানুষের মুক্তি দেওয়ার জন্য। তিনি এক দিকে যেমন আত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তেমনি ভিক্ষা করে অনাহারী মানুষের মুখে তুলে দিয়েছেন ক্ষুধার অন্ন। এমনি ভাবে ফকির মজনু শাহ বাংলার ইতিহাসে যেমন চির স্মরনীয় হয়ে আছেন তেমনি আদমদীঘির ইতিহাসেও। বর্তমানে বিলটি কচুরী পানাতে ভরাট হওয়ার পথে।  বিলের চারি দিক ধান চাষ হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি বিজড়িত রক্তদহ বিলটি এখন বিলপ্তির পথে।  ফকির মজনু শাহ স্মৃতি বিজড়িত বিলটি সংস্কারের দাবী জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত