আদমদীঘিতে বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক, দিশেহারা কৃষক
প্রকাশ: ২ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩০ | আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:২৩
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির প্রবনতা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। গত এক মাসে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নশরৎপুর ও ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠ থেকে অন্তত ২৫টি মিটার ও দু’টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। মিটার ও ট্রান্সফরমার চোর চক্রের দাবি করা টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেওয়ার পরও থামছে না চুরি। চোরেরা একই মিটার একাধিকবার চুরি করছে এবং প্রতিবারই গভীর নলকুপ মালিকদের নিকট থেকে একই কৌশল ব্যবহার করে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। কৃষকদের দাবি, বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না। ফলে এই চক্রটি চুরির মাত্রা আরো বারিয়ে দিয়েছে। এদিকে মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছরের ইরি-বোরো চাষ নিয়ে ৃকৃষকরা চরম সমস্যায় পড়েছেন।
আদমদীঘি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেশরতা গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক ছিদ্দিক প্রাং বলেন, প্রতি বছর আমাদের গভীর নলকূপের মিটার চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায় এবং মিটার নিয়ে যাওয়ার সময় একটি কাগজে বিকাশ নাম্বার লিখে রেখে যায়। উক্ত নাম্বারে বিকাশে টাকা পরিশোধ করা হলে চোরেরা বলে দেয় চুরি যাওয়া বৈদ্যুতিক মিটার কোথায় আছে।
নশরৎপুর ইউনিয়নের মঠপুকুরিয়া গ্রামের গভীর নলকুপের মালিক গোলাম রব্বানী জানান, গত এক মাসে এই ইউনিয়নের কয়েকটি গভীর নলকুপ থেকে প্রায় ২০টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে মঠপুকুরিয়া গ্রামের হাজী মোহাম্মাদ আলীর মিটার চুরি হয়েছে দ্ইু বার। এ দুইবার চোরদের দিতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। একই গ্রামের আব্দুস সালামের মিটার চুরি হয়েছে তিনবার। তাকে চোরদের দিতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা। নিমকুড়ি গ্রামের বেলাল হোসেনের মিটার চুরি হয়েছে দুই বার, টাকা দিতে হয়েছে ১০ হাজার। বশিকোড়া গ্রামের মহসিন আলীর মিটার চুরি হয়েছে দুই বার, চোরদের টাকা দিতে হয়েছে ৩০ হাজার। ধনতলা গ্রামের আব্দুর জলিলের মিটার চুরি হয়েছে তিনবার, টাকা দিয়েছেন ১৬ হাজার। তিলোচ গ্রামের ইদ্রিস আলীর মিটার চুরি হয়েছে একবার টাকা দিয়েছেন ১৫ হাজার। একই গ্রামে আব্দুস সাত্তারের চুরি হয়েছে একবার, চোরদের টাকা দিয়েছেন ১৫ হাজার। একই ভাবে উপজেলার পাহালোয়নপাড় গ্রামের বেলাল হোসেন ও কামরুল ইসলামের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোরোরা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর ট্রান্সফরমারের ভিতরে থাকা যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় বেলাল হোসেন আদমদীঘি থানায় একটি সাধারন ডায়েরী দায়ের করেছেন। বেলাল হোসেন বলেন থানায় ডায়েরী করার পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা করতে পারেনি। গভীর নলকুপের মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, মিটার চুরির পর চোরেরা নলকুপের মালিকদের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি হলে তারা একটি বিকাশ ও নগদ নম্বর দেয় এবং টাকা দেওয়া হলে একটি নির্জন জায়গায় মিটার রেখে যায়। তিনি বলেন, এভাবে চুরি অব্যাহত থাকলে আমাদের আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া মৌসুমের শুরু থেকে চুরি শুরু হওয়ায় অনেকে এখন ধান রোপন করতে পারেননি। আদমদীঘি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, এ থানায় আমি নতুন। এ বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি এবং র্যাব’সহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা নিচ্ছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে এই চক্রকে আইনের আওতায় আনতে পারবো।
দুপচাঁচিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম গোলাম রব্বানী বলেন, তার আওতাধীন এলাকায় মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। গত দুই মাসে প্রায় ৫০টি মিটার ও ট্রান্সমিটার চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত