১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন- মো.জয়নাল আবেদীন

  জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:০৪ |  আপডেট  : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০১

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে ছাত্র জনতা যে সব আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল তারমধ্যে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অন্যতম। বর্তমানে রাজনৈতিক দল গুলির ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের বেশির ভাগই ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। দু একজনে যতটুকু জানে তাও সঠিক নয়।

১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ একটি বড় আকারের আন্দোলন শুরু করে যা ছিল শিক্ষা বিষয়ক সমস্যাকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন ও উন্নয়ন বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য পাকিস্তানের শিক্ষা সচিব ড: এমএম শরিফকে সভাপতি করে দশ সদস্য নিয়ে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। দশ সদস্যের ছয় জন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এবং চার জন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়োগ পান।পূর্ব পাকিস্তানের সদস্যরা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: মমতাজ উদ্দীন আহমদ,ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সভাপতি আব্দুল হক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যাপক আতোয়ার হোসেইন ও ঢাকা ইন্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ড: এ রশিদ। শিক্ষা কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট প্রেসিডেন্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করে যা ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়।এতে উচ্চ,মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে কিছু সাধারণ সুপারিশ করে। আইয়ূব খান তাঁর আত্মজীবনী ‘প্রভু নয় বন্ধু’ বইয়ে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-

১.কমিশন সুপারিশ করেছে যে,উঁচ্চ শিক্ষার মানের ওপর জোর দেওয়া উচিত,যাতে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের উপযুক্ত হিসেবে তুলনা করা যায়।এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান উন্নত করা ছিল অপরিহার্য।

২.জাতি গঠনের প্রয়োজনে শিল্প,বানিজ্য ও কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন বিপুল সংখ্যক লোকের প্রয়োজন এবং নতুন রাষ্ট্রের জন্য সততা,দেশপ্রেম এবং সেবার আদর্শের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের প্রয়োজন। মাধ্যমিক স্কুল কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রধান জোর ছিল শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের প্রস্তুতির ওপর । এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্যে কমিশন সুপারিশ করেছে যে,মাধ্যমিক শিক্ষা শুধু উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে না থেকে তার নিজস্ব উদ্দেশ্যসহ সুনির্দিষ্ট একটি স্তর হওয়া উচিত।

৩.কমিশন মনে করেছিল যে, দ্রুততার সঙ্গে অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজন একটি সাধারন ভাবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যারা বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তিগত এবং কৃষি অনুশীলনগুলোর নতুন আবিষ্কারগুলো বুঝতে এবং প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন আর যারা যেকোনো গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো,স্থানীয় এবং জাতীয় সমস্যাগুলো বুঝতে এবং বিজ্ঞতার সঙ্গে এবং কাজের মধ্য দিয়ে বিকল্প প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।

শিক্ষার তিন স্তরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,”শিক্ষা সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে নিজ দেশের উন্নয়নের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত করা”। বইয়ের অন্যন্য অনুচ্ছেদে তিনি যা বলেছেন তাতে প্রতীয়মান হয় যে আইয়ুব খানের নির্দেশই কমিশনের রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়েছে।

এই রিপোর্টে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বের কথা থাকলেও সবচেয়ে অবাস্তব ও অগণতন্ত্রিক সুপারিশ ছিল বিনা মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করা। অর্থাৎ গরিব মানুষকে তার ছেলে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য খরচ বহন করতে হবে। এছাড়া দুই বছরের স্নাতক কোর্স তিন বছর করা, প্রতিটি বিষয়ের পাস নম্বর ৪০% স্থির করা, দ্বিতীয় বিভাগের জন্য ৬০% ও প্রথম বিভাগের জন্য ৭০% পেতে হবে।পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীকে একবার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার সুপারিশসহ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি পড়ারও সুপারিশ করেছিল কমিশন।

শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী ছাত্র সমাজ আন্দোলন শুরু করে।হোসেন সহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন বেগবান হয়। জগন্নাথ কলেজ, ইডেন গার্লস কলেজ, ঢাকা কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। ঢাকা কলেজের আন্দোলন একটি সাংগঠনিক রুপ ধারন করে। সেখানে ‘ডিগ্রী ফোরাম ‘ নামে ছাত্রদের একটি সংস্থা গড়ে ওঠে।এর পর পর জগন্নাথ কলেজ, কায়েদ-ই- আজম কলেজ (সোহরাওয়ার্দী কলেজ),ইডেন গার্লস কলেজ, ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফোরাম নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করে। ছাত্রদের আহবানে ১৯৬২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ঢাকা ও প্রদেশের অন্যান্য স্থানে ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা হতে থাকে। আগস্ট মাসের শুরুতে আন্দোলনে গুনগত পরিবর্তন আসে। ১০ আগস্ট ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কাজী ফারুক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গ্রাজুয়েটও উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সের ছাত্র প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করে। কাজী ফারুক আহমেদ ছাত্রদের বোঝাতে সক্ষম হন যে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন এবং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন অবিচ্ছেদ্য । প্রতিরোধ আন্দোলন ছাত্র ও অন্যান্য শক্তির সমন্বয়ে যৌথভাবে পরিচালনা করতে হবে।

১০ আগস্টের সভায় ১৫ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ১৫ আগস্টের ধর্মঘটের পরে ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছাত্র বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক স্কুল কলেজের ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহন অব্যাহত রাখে।
ছাত্র ইউনিয়নের কাজী ফারুক আহমেদ ও ছাত্র লীগের আবদুল্লাহ ওয়ারিস ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক। আন্দোলনের প্রতি ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র লীগের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ভিন্ন। ছাত্রলীগ শুধু ছাত্রদের দাবিদাওয়ার মধ্যে আন্দোলন সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে আর ছাত্র ইউনিয়ন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বৃহত গণআন্দোলনের কথা ভাবত। আন্দোলন বেশ জোরদার আকার নিলে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফোরাম সর্বদলীয়ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে নতুন রুপে অগ্রসর হয়। ১৫ আগস্টের সাধারন ধর্মঘট আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা ,রাজপথে বিক্ষোভ এতে অবদান রাখে।

১৫ আগস্ট কলা ভবনের আমতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কাজী জাফর আহমেদ আর ছাত্র লীগের শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্র সমাবেশে যোগ দেয়। ছাত্র নেতাদের ভাষণে ছাত্র ছাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ছাত্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা চলতে থাকে। ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের চারপাশে অবস্থান কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। অন্য কোন রকম কর্মসূচি নিলে পরিনতি মারাত্বক হবে বলে ছাত্রদের হুমকি দেওয়া হয়। ছাত্ররা ১৭ সেপ্টেম্বর প্রদেশব্যাপী সাধারন ধর্মঘটের ডাক দেয়।

১০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী মুক্তি পেয়ে ১৬ তারিখে তিনি ঢাকায় আসেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো নিয়ে ছাত্রলীগের সাথে ছাত্র ইউনিয়নের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যদিও ১৭ তারিখের কর্মসূচি পালনে কোন প্রভাব পড়েনি। ছাত্র জনতার আন্দোলন দমাতে পুলিশ - সামরিক বাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়। জনতার সাথে সংঘর্ষ হয়। গুলিতে মোস্তফা,বাবুল,ওয়াজিউল্লাহ সহ কয়েকজন শহিদ হয়। অনেকে আহত হয়। ঐ দিন খুব সকাল থেকে বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ছাত্ররা পিকেটিং শুরু করে। এতে কোনো কোনো জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। প্রাদেশিক মন্ত্রী খাজা হাসান আসকারীর ও পুলিশের তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হরতালের সমর্থনে ঢাকার রাজপথ লোকজনে ভর্তি ছিল। রেলওয়ে ক্রসিং থেকে সদরঘাট পর্যন্ত নবাবপুর রোডে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়।

সকাল নয়টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা মানুষে ভরে যায়। নবাবপুর রোডে গুলিতে কয়েকজন নিহত হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সমবেত জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে নবাবপুর রোডের দিকে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ছাত্রজনতার মেজাজ বুঝে ছাত্র নেতারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কাজী জাফর আহমদ সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তারপর উত্তাল জনতা সিরাজুল আলম খান,মহিউদ্দীন আহমদ,হায়দার আকবর খান রনো,রাশেদ খান মেনন,আইয়ূব রেজা চৌধুরী,রেজা আলী এবং অন্যান্যদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ত্যাগ করে।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে ছাত্র জনতার বিশাল মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করে তোপখান রোডে জড়ো হয়ে সরকারি কর্মচারীদের মিছিলে যোগ দিতে আহবান জানায়। তারা গাড়ি চলাচলও বন্ধ করে দেয়।এসময় একদল পুলিশ এসে মিছিলের ওপর লাঠিচার্জ করে। জনতা ইঁটের টুকরা ছুড়ে এর জবাব দেয়। পুলিশ সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে দেয়। সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ছাত্র জনতা নবাবপুর রোডে যাওয়ার জন্য আবদুল গনি রোডে সমবেত হয়। 

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার রিপোর্টে লিখা হয়-
“মিছিলটি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে সচিবালয়ের সামনে আবদুল গনি রোডের দিকে যায়। পুলিশের সঙ্গে কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধ ছাড়াই অর্ধেক মিছিল এই পথ ধরে অগ্রসর হয়।মিছিলকারীদের পক্ষ থেকে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পর পুলিশ বাহিনী ট্রাক থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর একটি ছোটাছুটির ঘটনা ঘটে। দুই রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। আমি একদল লোককে তীব্র ব্যথায় হাঁটুর ওপর ঝোকা অবস্থায় দেখতে পাই। তাকে জোর করে কমিশনারের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একটি ,বড়জোর ,দশ বছরের বালকও আহত হয়। এই সময়ে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পাল্টা জবাব দেয়। পুলিশও লাঠিচার্চ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলকারীরা অবশ্য পুনরায় জড়ো হয় এবং তাদের হারানো শক্তি ফিরে পেয়ে আবদুল গনি রোড দিয়ে চলে যায়। উভয় পক্ষ থেকে যথেষ্ট ইটপাটকেল নিক্ষেপ হলেও মিছিলটি বিনা বাধায় জিন্নাহ এভিনিউ হয়ে নবাবপুর রেল গেটের দিকে অগ্রসর হয়।”

অবজার্ভার পত্রিকায় সাধারন মানুষের অংশগ্রহনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। আসলে ১৭ সেপ্টেম্বরের মিছিলে অংশগ্রহনকারীদের ৯০% ছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপার থেকে বিপুল সংখ্যক নৌকার মাঝি এবং গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্রশস্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেন।
যশোরেও ১৭ তারিখে বিক্ষোভকারী জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে ৪১ জন পুলিশ কনস্টেবল এবং পুলিশ সুপারসনিক ৪৩ জন আহত হয়েছে বলে এপিপি পরিবেশিত খবর হতে জানা যায়। চট্টগ্রামেও জনতা পুলিশ সংঘর্ষ হয়। ৫০ জন পুলিশ সহ ১০০ জন আহত হয়।পরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়।
আন্দোলনরত ছাত্র নেতারা ঘোষণা দেয় যে তিনদিনের শোক পালন করা হবে এবং এ সময়ে তারা কালো ব্যাজ ধারণ করবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোস্টেলে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।১৮ সেপ্টেম্বর তারা প্রদেশব্যাপী সাধারন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এই জানাজার অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেলুচিস্থানের দুই সুপরিচিত প্রগতিশীল নেতা খায়ের বক্স মাররী ও গাউস বক্স বেজেন্জো। জানাজার পর একটি শোক মিছিল বাহির করা হয় ১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আটক সব বন্দির মুক্তি ও আহত-নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিবৃতি প্রদান করেন। এই নেতারা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দী,আতাউর রহমান খান,আবু হোসেন সরকার,শেখ মুজিবুর রহমান,ইউসূফ আলী চৌধুরী( মোহন মিয়া),মাহমুদ আলী,মোহসেনউদ্দীন আহমদ(দুদু মিয়া),সৈয়দ আজিজুল হক এবং শাহ আজিজুর রহমান। ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে একটি সর্বদলীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মো.জয়নাল আবেদীন

*সহায়ক গ্রন্থ:- বাংলাদেশের অভ্যুদয় দ্বিতীয় খন্ড,বদরুদ্দীন উমর
লেখক- বীর মুক্তিযোদ্ধা,গবেষক।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত