১১৩ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য বিআরটিএতে, অনুসন্ধানে দুদক
প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৫ | আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯
আয়ুষ্কাল শেষে অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপন করতে বিআরটিএতে তিন ধাপে হয় ঘুষ লেনদেন। এছাড়াও অন্য যেকোনো ধরনের সেবা পেতে ব্যাপক হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের।
অভিযোগ উঠেছে, অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপনসহ বিআরটিএ থেকে যেকোনো ধরনের সেবা পেতে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতে হয়। যার পরিমাণ ১১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপন করতেই ঘুষ নেওয়া হয় প্রায় ১০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
গত ২৮ জানুয়ারি এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজধানীর বিআরটিএর মিরপুর অফিসে ছদ্মবেশে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর কমিশন থেকে এবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুদক সচিব মো মাহবুব হোসেন বিআরটিএর ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দুদকের কাছে বিআরটি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়ুষ্কাল শেষে অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপন করতে বিআরটিএতে তিন ধাপে ঘুষ দিতে হয়। প্রথম ধাপে ভাঙতে দিতে হয় কমপক্ষে ৫০ হাজার, এরপর নতুন নিবন্ধন নিতে ২৫ হাজার ও ভাঙা অটোরিকশা ফেরত পেতে ১০ হাজার টাকা। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে ১২ হাজার ৫০০ অটোরিকশা প্রতিস্থাপন ও মেয়াদ বাড়াতে ১১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সিএনজি প্রতিস্থাপন করতেই ঘুষ নেওয়া হয়েছে প্রায় ১০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকনের পক্ষ থেকে দুদকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাজধানীতে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। এসব গাড়ির ইকোনমি লাইফ (আয়ুষ্কাল) ধরা হয় ১৫ বছর। এরপর অটোরিকশাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে এসব গাড়ি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে প্রতিস্থাপন শুরু করে বিআরটিএ। এর জন্য তখন সরকারি ফি ছিল ১২ হাজার ১০০ টাকা। ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব অটোরিকশা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এসব অটোরিকশার মালিকদের নতুন করে আবার নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী-মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু ও সদস্য সচিব এটিএম নাজমুল হাসানসহ একটি চক্র প্রতিস্থাপন কাজে জড়িত। তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা দালাল হিসেবে নিয়োজিত। এই দালাল চক্র গাড়ি ভাঙা ও নিবন্ধনের জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে পরিষদের ওই নেতাদের হাতে তুলে দিতেন। তারাই বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অংশ লেনদেন করতেন। ঘুষের এই টাকা বিআরটিএ কর্মকর্তা, মালিক সমিতির নেতা ও দালালদের মধ্যে ভাগ হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুসা জেবিন ও মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়ার সমন্বয়ে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। গ্রাহক সেজে দুদকের এনফোর্সমেন্টের টিমের অভিযানে হাতে-নাতে বাবু রায় নামে একজন দালালকে আটকও করে দুদক। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সঙ্গে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দালালকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত