হামাসের ৭ অক্টোবর হামলা কি কাসেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৯ |  আপডেট  : ১৪ মে ২০২৪, ১৭:১৮

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আকস্মিক অভিযান ইরানি জেনারেল কামেস সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এক কর্মকর্তার মন্তব্যের পর এ বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে ইরানের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস।

ইসরাইলে হামাসের হামলাকে ইরানি জেনারেল কামেস সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের ইসলামিক রিভোল্যুশনারী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) মুখপাত্র রামাদান শরিফ। গত বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে রামাদান শরিফ দাবি করেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলা ছিল ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ।

তবে তার এমন বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছে হামাস। রামাদান শরিফের মন্তব্যের পরপরই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি জাানায়, ‘আল আকসা তুফান অভিযান ও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইআরজিসি মুখপাত্রের মন্তব্য নাকচ করছে হামাস।’ বিবৃতিতে হামাস স্পষ্ট করে, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পবিত্র আল আকসা মসজিদে ইসরাইলি হুমকি প্রতিরোধই আল আকসা তুফান অভিযানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বিবৃতি মতে, ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন যে অভিযান চালিয়েছে তা ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অব্যাহত আগ্রাসনের জবাবে।’

এছাড়া রামাদান তার বিবৃতিতে আরও বলেন, মৌসাভিকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের অপারেশন আল আকসা তুফানের সাফল্য এবং গাজায় ৮০ দিনেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধে ব্যর্থতার কারণেই মৌসাভিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। ইরানের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরাইলের এই বিমান হামলা প্রতিশোধ নেয়ার মতো। কিন্তু এখন প্রতিশোধ নেয়ার সময় না। তাছাড়া একেবারে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি বিষয়টা এমনও না। তিনি আরও বলেন, ইরান এই ঘটনায় সচেতন রয়েছে। এই যুদ্ধের পরিণতি ভয়াবহ হবে।

ইরানি কর্মকর্তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলেরও হাত রয়েছে এবং সময় মতো এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপর প্রায় তিন বছর পার হলেও সোলাইমানি হত্যার জবাবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তেহরানকে।

প্রসঙ্গত, প্রায় তিন বছর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ইসলামিক রিভোল্যুশনারি গার্ড কোরের কুদস ফোর্সের অধিনায়ক কাসেম সোলাইমানি ছিলেন ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের একজন।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে কাসেম সোলাইমানির হত্যার স্টাইলেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আইআরজিসির শীর্ষ উপদেষ্টা সায়েদ রাজি মৌসাভি। স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) এই কমান্ডারকে হত্যা করা হয়। সিরিয়া ও ইরানের মধ্যকার সামরিক জোটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

ফিলিস্তিনের ভূমি জবরদখল, ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও বারবার পবিত্র আল আকসা মসজিদের অবমাননার জবাবে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আল আকসা তুফান নামে আকস্মিক অভিযান চালায় হামাস। এতে তিন শতাধিক সেনাসহ ইসরাইলের সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়। জিম্মি হয় আরও দুই শতাধিক।

হামাসের ওই অভিযানের পরই গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল যা গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২১ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার বেশিরভাগিই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরও প্রায় ৫৫ হাজার। এছাড়া পুরো গাজা উপত্যকা কার্যত মাটির সাথে মিশে গেছে।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত