হত্যা মামলার বিচার আদালতে, ধান নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতে
প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ১৪:৩৮ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮
মাদারীপুরে একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে জমির বেরো ধান কাটতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। পুরুষশূর্ণ্য এলাকায় নারীরাও জমিতে ধান কাটতে গেলে পড়তে হচ্ছে বাঁধা আর হুমকির মুখে। চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকের পরিবারের। আসামীপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমিতে ধান কাটতে দেয়া বাঁধা হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের লোকজনের। শিগগিরই পাকা ধান কাটতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানায় পুলিশ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড রোদে পুড়েও যাচ্ছে। ধান কাটতে না পারায় জমিতেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কৃষকের পরিবার। এই দৃশ্য মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার। রাধিকা হালাদার হত্যাকান্ডের জেরে বাড়িছাড়া আসামীপক্ষ। কয়েকশ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বেরো ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড রোদে পুড়ে ঝড়ে পড়ছে ধানের দানা। নারীরা ধান কাটতে গেলে লাঠিশোঠা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। এমন কি, শ্রমিক দিয়েও ধান কাটতে গেলে আসছে একের পর এক বাঁধা। এতে দিশেহারা কৃষকের পরিবার। আসামীপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমিতে ধান কাটতে দেয়া বাঁধা হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের লোকজনের।
কৃষক সুকুমার ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী বলেন, একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবার ও বংশের ভাই-ব্রাদার-স্বামীকে আসামী করা হয়েছে, সবাই পলাতক। চাষ করা জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে, আমরা নারীরা জমিতে ধান কাটতে আসলে লাঠিশোটা নিয়ে আমাদের উপর বাদীপক্ষ হামলা চালায়। এই ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারাবছর না খেয়ে মরতে হবে। প্রলাদ মন্ডলের স্ত্রী বিনা রানী মন্ডল বলেন, আমার স্বামী, দেবর-ভাসুর সবাই বাড়িছাড়া। আমাদের পরিবারের লোকজন জমিতে চাষ করে গেছে, সেই জমিতে এখন ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। ধান কাটতে গেলে বাদীপক্ষ হামলা চালায়, পরে ভয়ে জমি থেকে ওঠে চলে যাই। দিলীপ বৈরাগীর স্ত্রী চম্পা বৈরাগী বলেন, বছরে একবার জমিতে ধান হয়। এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখন বেঁচে থাকার কোন রাস্তা নেই, ধান কাটতে আসলে বাদীপক্ষের লোকজন লাঠিশোঠা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমন করে। আমাদের ধাওয়া দিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।
রাধিকা হালদারের ভাইয়ের ছেলে বিল্পব হালদার বলেন, আসামীদের পরিবারের কটুক্তিমূলক কথার কারনেই ধান কাটতে বাঁধাসৃষ্টি হয়েছে। জমির ধান জমিতেই থাকবে। অন্যকেউ ধান কাটতে পারবে না। নিহত রাধিকা হালদারের পুত্রবধু বলেন, আসামীদের পরিবারের নারী সদস্যরা অনেক গালিগালাজ করে, তাই ধান কাটতে দেয়া হচ্ছে না। মামলার আসামী যারা, তারা সরাসরি ধান কেটে নিয়ে যাক, অন্যকেউ ধান কাটতে আসলে এমনই হবে।
পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার ব্যাংক ম্যানেজার কামাল মাতুব্বর বলেন, পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকায় মারামারিতে একজন লোক মারা গেছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামীও আছে। আসামীপক্ষের লোকজন পলাতক। বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছে। এই আসামীপক্ষের জমিতে ধান পেকে গেছে, কিন্তু বাদীপক্ষের লোকজন ধান কাটতে দিচ্ছে না। ৩-৪ দিনের মধ্যে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে কৃষকের পরিবারের।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, জমিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে বাঁধা দেয়া সেটাও আরেকটি অপরাধ। ধান কেটে নেয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ধান পেকে জমিতে নষ্ট হচ্ছে, সেই ধান কাটতে বাঁধা প্রদান করা হচ্ছে, এজন্য কৃষকের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ পিকনিকের গাড়িতে সামনে বসা নিয়ে মিল্টন হালদার ও প্রকাশ বৈরাগীর ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে হালদার ও বৈরাগী বংশের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাধিকা হালদারকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪দিন পর মারা যায় সে। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মিতালী হালদার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৪০ জনের নামে একটি মামলা করেন। বর্তমানে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে, আর বিচারাধীন রয়েছে আদালতে।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত