স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সামনেই স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চীফ হুইপের ক্ষোভ

  শফিক স্বপন , মাদারীপুর

প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪৪ |  আপডেট  : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৯

স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সামনেই স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি। মঙ্গলবার বিকেলে জেলার শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চীফ হুইপ স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার নানান অনিয়ম তুলে ধরলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এজন্য মূলত জনবল সংকটকে দায়ী করেন। তবে মন্ত্রী স্বীকার করেন সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে যন্ত্রপাতি কম টেকসই হচ্ছে যা লজ্জাজনক । তবে মন্ত্রী ও চীফ হুইপ দুজনই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ট ভূমিকায় বিনামূল্যে ৪০ হাজার কোটি টাকায় বিনামুল্যে টিকা প্রদান,স্বাস্থ্য কর্মীদের সাহসী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।  এদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও চীফ হুইপ জেলার শিবচরের সন্ন্যাসীরচরে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টার উদ্বোধন ও সংলগ্ন জমিতে জেনারেল হাসপাতাল নির্মানের জমি পরিদর্শন, চৌধুরী ফাতেমা বেগম মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র ১০ শয্যা থেকে ২০ শয্যায় উন্নীতকরনের কাজ উদ্বোধন, শেখ হাসিনা ইনষ্টিটিউট অব হেলথ এন্ড টেকনোলজী উদ্বোধন, নির্মানাধীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নার্সিং ইনষ্টিটিউট এন্ড কলেজ পরিদর্শন, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল(ম্যাটস) এর ভিত্তিপ্রস্তর , শিবচর উপজেলা ১শ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল পরিদর্শন ও কোয়র্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ,শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। 

মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে বলেন,স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট রয়েছে আমরা তা বুঝি। মন্ত্রীর কাছে আমি অনুরোধ করবো। আমাদের যে জনবলের কাঠামোই আছে তা যদি আমরা ঠিকমতো কাজ করাতে পারি তাহলে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়তো। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ায় অনেক টাকা আমাদের বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা ঠেকানো যায়নি। দুপুর হলেই ডাক্তাররা বেসরকারি ক্লিনিকে চলে যায় অনেক দেশেই এগুলো নাই। সরকারি চাকরী করলে নাহলে বেসরকারি চাকরী করবে। শিবচরেও জনবল সংকট আছে। কিন্তু কিছু ডাক্তার শিবচর থেকে বেতন নেবে অথচ ডেপুটেশনে থাকবে অন্য ঢাকায়, এটাতো হতে পারে না। এটা এলাকার মানুষকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা দূর্নিতী। এটা দূর্নিতীকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। পদ শুন্য থাকবে আমরা জনবো পদ শুন্য আছে। কিন্তু বেতন নেবে শিবচর থেকে চাকুরী করবে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে । মাননীয় মন্ত্রী এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এছাড়াও চীফ হুইপ বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে  স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৩-৪ লাখ পদে জনবল সংকট রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির সময় আমরা ১৫ হাজার চিকিৎসক ,২৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। অথচ ৪০ বছরে ডাক্তার ছিল মাত্র ১৮ হাজার,নার্স ছিল ২০ হাজার।  করোনা পরিস্থিতি ও ডেঙ্গু সামাল দিয়ে আমরা এখন স্বাস্থ্য খাতের জনবল সংকট নিয়ে কাজ করছি। আমরা কমিটিও তৈরি করেছি। এখন করোনা যেহেতু কম আছে আমরাই বিভিন্ন উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে আমরা যাচ্ছি যাতে আমাদের হাসপাতালগুলো ভালভাবে চলে। মেশিনগুলো যাতে সচল থাকে সেটাও দেখা হচ্ছে। এটা সত্যি যে, আমাদের মেশিনগুলো বেশি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে আর পাশের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর এ·রে বা প্যাথোলজিক্যাল মেশিনগুলো ভাল চলে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। সরকারতো কম দিচ্ছে না। জেলা হাসপাতালগুলোতে দেখবেন আমরা কি করেছি।  বিএনপির আমলে মেডিকেল কলেজ ছিল হাতেগোনা ১৫ টা এখন ৩৮ টা। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না বিএনপির আমলে এখন ৪ টা। ক্যান্সার কিডনি ,হার্টেও স্পেশাল হাসপাতাল হচ্ছে। কারন এসব রোগী বেড়ে গেছে। 

মন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়নি। যুদ্ধের কারনে দাম বাড়ছে জিনিসপত্রের। রাশিয়া ইউক্রেন থেকে তেল ও শস্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় ও করোনার কারনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খাবারের অভাব যাতে না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন। বিএনপি এসব নিয়েও পানি ঘোলা করছে। কোন দেশে এমন সময় কেউ সরকারের বিরুদ্ধাচারন করে না। অথচ তারা মিথ্যাচার করেই চলেছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। বিএনপি জামায়াতের এটা চিরদিনের স্বভাব। পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীসহ বহু মানুষকে হত্যা করেছিল। আবারও সেই চিন্তা। লাঠি নিয়ে মিছিল করে। বলে ধাক্কা দিয়ে সরকার ফেলে দেবে। তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। হিমালয় পর্বতকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যায় না। আওয়ামীলীগ সরকার শেখ হাসিনার সরকার হিমালয় পর্বত। 

কর্মসূচীগুলোতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের সচিব মো: সাইফুল হাসান বাদল,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আব্দুল হামিদ, পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক যুগ্ন সচিব মো: মাহাবুব আলম, স্বাস্থ্য বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক ডা: মো: ফরিদ হোসেন মিয়া, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক [প্রশাসন) ডা: সামিউল ইসলাম সাদিক,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী গোলাম মাহাবুব, পুলিশ সুপার মো: মাসুদ আলম [বিপিএম বার, পিপিএম) , শিবচর ডায়াবেটিক সমিতির চেয়ারম্যান রাজিয়া চৌধুরী, শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আ: লতিফ মোল্লা, পৌর মেয়র মো: আওলাদ হোসেন খান, মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা: মুনির আহমেদ খান, মাদারীপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক গোলাম মো: আজম, মাদারীপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসুদুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাজিবুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শাজাহান মোল্লা, সাধারন সম্পাদক ডাঃ মোঃ সেলিম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত