স্বজন হারানো বেদনা নিয়ে আমি একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২ মার্চ ২০২২, ১৫:২৯ |  আপডেট  : ২২ মার্চ ২০২৪, ১৩:১৩

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ বাস্তবায়ন করে দেশের মানুষের জীবনকে উন্নত ও সুন্দর করার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজন হারানো বেদনা নিয়ে আমি একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।  যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, সেটা আমাকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। এই একটা জায়গায় আমি বলবো আমাকে করতেই হবে। ’

বুধবার (০২ মার্চ) ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি)’ সভার (ভার্চ্যুয়াল) সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।  রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে উন্নত করা। বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেন সুন্দর হয়, সম্মানজনক হয়, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে পারে এটাই হচ্ছে আমার একমাত্র লক্ষ্য। যেটা জাতির পিতা সব সময় চাইতেন, বলতেন। ’

গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে উন্নত দেশ হবো। এইটুকু বলতে পারি এখন আর বাংলাদেশকে কেউ আর করুণার চোখে দেখে না। সম্মানের চোখে দেখে। ’

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ ঘটনাবহুল এই মাসের তাৎপর্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই মাসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসেই জন্ম নিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্ম-মর্যাদা দিয়েছেন। ’

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবের আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ’

করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে যখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা তখনও আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সচল রাখতে পেরেছি। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। এই অতিমারির সময়ও সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। ’

সরকারি কাজে জমি অধিগ্রহণের আগে ছবি তুলে রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে জমির দরকার হলে অধিগ্রহণের আগে সবার অগোচরে সেই জমির ছবি তুলে রাখতে হবে। জমি অধিগ্রহণের সময় কেউ যেন বলতে না পারে আমার জমিতে এটা ছিল ওটা ছিল।

ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ ছাড় সহজ করার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যেকোনো প্রকল্পে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ করে। তবে যাদের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় তাদের অর্থ পেতে নানা ঝামেলাও পোহাতে হয়। এসব ঝামেলা এড়াতে ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ ছাড় সহজ করার নির্দেশ দেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আমি অনেক আগে এক সময় ডিসি ছিলাম। সেখানে ভূমি অধি শাখায় জমি অধিগ্রহণের অর্থ ছাড়ে নানা সমস্যা হয় যায়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এটিকে সহজ করার জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, সরকার নানা ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে জমির প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী জমির সঠিক মূল্য দিতে বলেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নের জমির দরকারে হলে তার আগে সেই জমির ছবি তুলে রাখতে হবে। জমি অধিগ্রহণের সময় কেউ যাতে বলতে না পারে আমার জমিতে বিল্ডিং ছিল। এজন্য ছবি তুলে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর আরও বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জমি অধিগ্রহণের কথা শুনে অনেকে রাতারাতি জমিতে খুঁটি গেড়ে বসে। জমি অধিগ্রহণে আগে ফটো নিতে বলা হয়েছে। অনেকে ফসলের জমিকে বসতবাড়ি হিসেবে জাহির করে। অনেকে বলে বাপ দাদার ভিটা জমিতে এটা ছিল ওটা, তাজমহল ছিল। কোন জমি নিতে হলে আগে জমির ছবি নিতে বলেছেন যাতে করে কেউ বলতে না পারে জমিতে এটা ছিল ওটা ছিল।

এছাড়া সভায় ইজিপি নিয়ে প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এতে করে টেন্ডারবাজি কমেছে। এছাড়া বিনা পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছি তা আলোচনা হয়।

আজকের সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) দুই লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা সচিব প্রদিপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) দুই লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সরকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল। এ অর্থের বিপরীতে ১ হাজার ৭৫৪ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোট বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (৩৩.৮৫ শতাংশ) এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা (৬৬.১৫ শতাংশ)।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত