দুদুক ও মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে

সান্তাহার পৌরসভার মেয়র ও ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগের পুনঃ তদন্ত শুরু

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১৮:২৭ |  আপডেট  : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩২

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, পৌরসভার প্রকৌশলী (দায়ীত্বরত সচিব) এবং হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ঘটনায় পুনঃতদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা কার্যালয়ে পৌর কর্মচারিদের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ গত ১৮ নভেম্বর থেকে এ তদন্ত কাজ শুরু করেছেন ।  

অভিযোগে জানা গেছে, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার কর্মচারীদের প্রায় ৫৮ মাস বেতন বকেয়া পড়ে। বেতন না পাওয়ার কারনে কর্মচারিরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন । এ অবস্থায় পৌরসভার কর্মচারিরা বেতন না পাওয়ার কারন অনুসন্ধানে নামেন। অনুসন্ধানে তাঁরা পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন, পৌর প্রকৌশলী (দায়ীত্বরত সচিব) রেজাউল করিম, এবং হিসাব রক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে পৌরসভার বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমান পান । পরে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাউন্সিলর নাজিম উদ্দীনকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । তদন্ত কমিটির তদন্তে পৌরসভার তিনটি রোলার বে-আইনী ভাবে বছর ব্যাপী একটি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ১০ লাখ টাকা, পৌরসভার দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক খাতে প্রতিমাসে সাত শ্রমিক বেশী দেখিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ, মাছের আড়ত নির্মানের নামে ১৩ লাখ, সারের বাফার গুদাম প্রতিষ্ঠানের বকেয়া কর আদায় করে ৪৭ লাখ, কুকুর কামড়ানো ভ্যাকসিন কেনার নামে দ্ইু লাখ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনের নামে এক লাখ এবং এনজিও প্রতিষ্ঠানকে ঘড় বরাদ্দ দিয়ে পাওয়া পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রকৌশলী কাম সচিব ও হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার নামে গোপন প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১০ লাখ টাকা রাখার প্রমান মেলে। এ ছাড়া পৌরসভার আপ্যায়ন খরচের হিসেবে একাধিকবার প্রতি দুই লিটার কোমল পানির মূল্য ৩০০ টাকা ও প্রতি প্যাকেট হরলিকস বিস্কুটের মুল্য ৩১০ টাকা দেখানো হয় । 

পৌরসভার মাসিক সভায় বিভিন্ন অভিযোগ আলোচিত হবার প্রেক্ষিতে আভ্যন্তরিন তদন্ত কমিটি প্রাথমিক ভাবে আটটি খাতে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে।  তদন্ত শুরুর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তদন্ত বন্ধ করার জন্য  অফিস আদেশ জারি করেন । এ অবস্থায় ওই মাসের ৩০ তারিখে পৌর সভার ২৫ কর্মচারী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পত্র  বগুড়া জেলা প্রশাসক ও দুদুক বরাবরে দেয়া হয় । জেলা প্রশাসক দপ্তর ওই অভিযোগ পত্র গ্রহন করে ডাইরিভুক্ত করে। ডাইরী নং ৩৩। পরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদমদীঘি উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয় । এ বিষয়ে ইউএনও সাদেকুর রহমান ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তদন্ত শুরু করেন কিন্তু পরে তিনি বদলি হলে পরের ইউএনও আবদুল্লাহ বিন রশিদ বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। 

মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান গত ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগের তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করেন। পরবর্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহন না করে জেলা প্রশাসক কার্যলয় থেকে ফেরৎ পাঠানো হয়। করোনাকালীন সময়ে বিষয়টি চাপা পড়ে যায় । সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা কার্যালয়ে পৌর কর্মচারিদের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ গত ১৮ নভেম্বর থেকে পুনরায় এ তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে দায়িত্ব পেয়ে তিনি নতুন করে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন। এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে মেয়র তোফাজ্জল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি আগের করা অভিযোগের পুনঃ তদন্ত হচ্ছে । অভিযোগের বিষয়গুলো আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত