বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত

সাকা হাফং অভিযান

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৪১ |  আপডেট  : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৭

আব্দুল কাইউম খান মামুন
---------------------------------

 

দ্বিতীয় পর্ব
২৪ ডিসেম্বর ২০২১

তাজিংডং সামিট
রাতে অনেক তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তাই অনেক ভোরেই ঘুম ভেংগে যায়। আরেকটু শুয়ে থাকি ভেবে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, লাভ হলোনা। কিছু সময় পরে উঠে পড়লাম। ভাবলাম সবাই ওঠার আগে বাথরুমের কাজ সেরে ফেলি। উঠে মনে করেছিলাম আমিই মনে হয় প্রথম উঠলাম। কিন্তু কিসের কি, আরিফ ভাই এর শোয়ার জায়গা দেখি ফাঁকা, রুমেও নাই। বুঝলাম সে আগেই কাজ সারতে চলে গিয়েছে। আমি বের হতেই ওনার সাথে দেখা। এই পাড়ার টয়লেট ভালোই বলা যায়। আমি ফ্রেশ হয়ে আবার ঘরে ঢুকে দেখি আরো কয়েকজন উঠে পড়েছে। ঘরের সামনেই আগুন ধরিয়ে কয়েকজন লোকাল লোকজন বসে গল্প করছেন। আমরাও দু একজন সেখানে গেলাম। একে একে সবাই ই উঠে পরলো। নাস্তা রেডি হতেই সবাই খেয়ে নিলাম। এরপরে বড় ব্যাগ থেকে কিছু কাপড় কমিয়ে বা অনেকে বড় ব্যাগ রেখে ছোট ব্যাগে একদম প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে ওজন কমালাম। যেহেতু এই পাড়াতে আগামীকাল আবার ফেরত আসবো তাই সবকিছু নেয়ার কোন দরকার নেই। তবে আর যাই নেই না কেনো কফি, কফি খাওয়ার মগ এসব নিতেই হবে ।

সকাল ৯ টার দিকে আমরা সবাই বের হলাম। প্রথমেই একখানা গ্রুপ সেলফি নেয়া হলো। এরপরে একে একে আগাতে শুরু করলাম। এখন আমরা তাজিংডং এর চূড়ার ঠিক নিচে দিয়ে সিম্পলম্পি পাড়ার দিকে যাবো। তবে আমাদের সাথে কয়েকজন আছেন যারা আগে তাজিংডং সামিট করেননি। ওনারা আজ আগে সেটা সামিট করবেন, এরপরে সবাই আবার এগিয়ে যাবো। এই রুট টা পরিচিতই লাগছে। গতবছর এই রুটে মোটামুটি অর্ধেক মত পথে আসার পরে নুর এর ভালোই জ্বর এসেছিলো। তবে সে তখন ভালোই এনার্জেটিক ছিলো, ওষুধ একটা খেয়ে আবার হেঁটে চলেছিলো। এবার মনে হচ্ছে আরো বেশী এনার্জেটিক। এবার টিম সেই লেভেলের দৌড়ের উপরে আছে। তাজিংডং এর চূড়ায় যেতে মাত্র সোয়া একঘন্টার মত লাগলো। আমরা কয়েকজন বাদে বাকি সবাই চূড়ায় গেলো। চূড়ার ঠিক নিচে আমি, শালদা, সাদি, ইফতি, পলাশ বসে গল্প করছি। বাকি সবাই চূড়ায় বিভিন্ন পোজ দিয়ে ছবি, ভিডিও নিচ্ছে, আর নিচে বসে বসে তাদের সব বকবকানি শুনছি ।

আমরা যেখানে বসে ছিলাম জায়গাটা বসার জন্য বেশ ভালো। খুব সুন্দর ঠান্ডা বাতাস আসতেছিলো। নেটওয়ার্ক থাকাতে সবাই ই একটু করে বাসায় কথা বলে নিলো। 

কিছু সময় পরে সামিটাররা নেমে আসলো। কোথায় এখন সবাই নেমে যাবো, তা না, আমি নিজেই কয়েকজন কে নিয়ে ছবি তুলতে মত্ত হয়ে গেলাম । চূড়া থেকে নামার পথেই একটি গাছের শিকড়ে বসে খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। একে একে নিজে সহ কয়েকজনের ছবি তুলে দিলাম। সাদি কে ডেকে এনে জোর করে তুলে দিলাম। আমেরিকায় পিএইচডি করতে থাকা এই ছেলে ছবি তুলে দিতে বলতেও লজ্জা পায়। যদিও নিজের মোবাইলে সে অনেক ছবি তুলেই যাচ্ছে। আরো কিছু সময় ছবি তোলার পরে আমরা আগাতে শুরু করি। এখন যে রুটে আগাচ্ছি সেটাতে আমি আগে যাইনি। এবারই প্রথম। এখন শুধু নেমে চলা। একদম সিম্পলম্পি পাড়া পর্যন্ত একটানে নেমে গিয়েছে। কোথাও থামাথামি না করে আমরা নেমে চলেছি। তবে কারো মুখ বন্ধ নেই। কেউ হাসছে তো কেউ হাসাচ্ছে । চূড়া পর্যন্ত উঠে আসার সময়েই কারো মধ্যে তেমন কোন ক্লান্তি দেখিনি। আর এখন তো শুধু নেমে চলা। হঠাৎ দেখি আতিক ভাই ভিডিও করছেন। ঢুকে গেলাম ভিডিও এর মধ্যে। ছবি, ভিডিও নিতে গিয়ে দেখা যায় আমি নিজেই বাদ পরে যাই, তাই সুযোগ পেয়ে কিছু সময় পরেই গতকাল শেরকর পাড়ার ঢোকার সময় যে গান শুনতেছিলাম, সেটার মত গান শুনতে পাই। বুঝতে পারছিলাম সিমতলোম্পিং পাড়ার কাছাকাছি চলে এসেছি। আরেকটু আগাতেই পাড়াটি দেখতে পেলাম। দুপুর হওয়াতে বাইরে তেমন মানুষ দেখা যাচ্ছে না। উপর থেকে পাড়া টা দেখে ভালোই লাগছে। আতিক ভাই, শালদা সহ কয়েকজন ভিডিও করছে। আমিও একটু ভিডিও নিলাম। এই পাড়া তে বেশি সময় থাকতে চাচ্ছিনা, তাই ভালোভাবে কোন ভিডিও নিতে পারিনি। ২০১৯ সালে এই পাড়া এত সুন্দর ছিলো না। এই আড়াই বছরে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। অবাক হলাম বিশাল এক মাঠ দেখে। আমরা যে রাস্তা ধরে নেমে চলেছি, তার সাথেই মাঠ টি। সুন্দর ভাবেই ফুটবল খেলা যাবে। তবে সেজন্য পাহাড়ের অনেকটা অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে। 

যাইহোক আমরা আস্তে ধীরে ও কোন ধরনের হৈ হল্লা ছাড়া পাড়ার কাছাকাছি চলে আসলাম। রাস্তার পাশেই একটি বাসা, কিছু মালামাল ও দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত দোকানই হবে, এখানে কিছু মানুষ একসাথে বসে আছে। গল্প করছে। সামনে একটি বড় পাতিলে কিছু রান্না হচ্ছে। আগামীকাল বড়দিন, তার পরেরদিন নির্বাচন। সেই উপলক্ষ্যে অনেকেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় আসা যাওয়া করছে তারা। হয়তো সে উপলক্ষ্যে কোন আয়োজন। 

পাড়া অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে চলেছি। একটু পরেই দুপাশে গাছে ঢাকা, এমন একটি রাস্তা শুরু হয়। অল্প ঢাল হয়ে উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। আমি আবির এর ইফতি পেছনের দিকে ছিলাম। হঠাৎ ইফতি বললো সে পানি খাবে। দেখে মনে হলো খারাপ লাগছে। জিজ্ঞাসা করলাম, তখন বললো তার খারাপ লাগছে। মিষ্টি জাতীয় যা আছে খেতে বললাম। আবির তার সাথে থাকা গ্লুকোজ মিশানো পানি খেতে দিলো। আমি খেজুর দিলাম। একটু সময় পরে যখন বললো যে সব ঠিক আছে, তখন আবার আগাতে শুরু করি। 

আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে একটি টিনশেড স্থাপনা দেখতে পাই। সম্ভবত কোন স্কুল ছিলো। যতদূর মনে পড়ে ২০১৯ সালে যখন সাকার কাছাকাছি গিয়েও ফেরত চলে আসছিলাম, এখানে দাড়িয়েই আমি, আরিফ ভাই, পলাশ, আসাদ, রায়হান - আমরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে জোক কেটে কেটে ফেলতেছিলাম। আমার তো গলার ঠিক উপর থেকে একটি জোক কেটে নামিয়েছিলাম। 

স্কুলটার পরেই আবার উপরের দিকে ওঠা। তবে এই স্থান টা অনেক সুন্দর। পাহাড়টার ঢাল অনেক চওড়া। জুম চাষ হয় এখানে। কোন ধরনের বড় গাছ নেই এখানে। একটু সামনেই আমার কয়েকজন কে একটি গাছের গুঁড়ির উপরে বসে থাকতে দেখলাম। সেখান থেকেই একটি ট্রেইল সামনের দিকে গিয়েছে, আরেকটি ডান দিক দিয়ে গিয়েছে। পলাশ আর আরিফ ভাই খুজতেছিলো কোন দিক দিয়ে যেতে হবে। আমরা বাকিরা বসলাম। ইফতি কে কিছুটা রেস্ট দিলাম, সাথে আরো গ্লুকোজ। কড়া ভাষায় সাবধান করে দিলাম, খারাপ লাগল যেনো সাথে সাথে জানায় আর ঢাকায় ফিরে যেনো ডায়াবেটিস টেস্ট করায়। 

আমরা গল্প করতে করতে বাকিরা সবাই আগাতে শুরু করে দেয়। আমরা একটু আড়ালে থাকায় আর দেখতে পাইনি। হঠাৎ মনে হলো কারো সাড়া পাচ্ছিনা কেনো, পিছিয়ে দেখি কেউ নেই। বুঝলাম তারা এই ট্রেইলে যায়নি, ওই ডানদিকের ট্রেইল ধরে এগিয়েছে। আরো কিছুটা আগাতেই দেখি পলাশ ডাকছে অনেক দূর থেকে। সবাইকে নিয়ে আগাতে শুরু করলাম। পলাশ এর কাছে যেতেই জিজ্ঞাসা করলো আমরা কি ভুল পথে গিয়েছিলাম কিনা। বললাম না, আমরা তো ভেবেছিলাম সবাই বসেই আছে, একটু আড়ালে থাকাতে হয়তো কারো ডাক শুনিনি। 

কিছুদূর গিয়ে নামতে শুরু করলাম। মনে পড়ে গেলো সেই ২০১৯ এর কথা। সেখানে যে রাতে পৌঁছেছিলাম সে রাতে টানা মানে একটানা বৃষ্টি হয়েছে। সকালেও উঠে দেখি বৃষ্টি। ধরেছে বাথরুম, কই যাই কই যাই। গৃহ কর্তা দাদা দেখিয়ে দিলেন কোথায় যেতে হবে। কিন্তু কথা হলো এই পাড়ায় কোন টয়লেট নাই। এমনিই সেরে নিতে হবে। বাইরে বৃষ্টি দেখে লুঙ্গি খুলে গামছা পরে নিলাম, কারণ বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি, লুঙ্গি ভিজবেই। মাথায় ছাতা, হাতে একটা বদনা নিয়ে ওনার দেখানো পথে গেলাম। কিছুটা নিচে নামতে হয়। আগাতেই শুনি পানির শব্দ। অনেক জোরে পানি নেমে আসছে কোথাও থেকে। সমানে এগিয়ে দেখলাম পাড়ার উপরের দিকে থেকে একটি ছড়ার মত পানি নেমে আসছে, কিন্তু পানির বেগ অনেক বেশি। ওই ছরার পাশেই একটি বড় সমতলের পাথর আছে, সেটার উপরে বসেই কাজ সারতে হবে। কাজ শেষ করতে না করতেই এক নতুন অভিজ্ঞতা হলো। প্রমাণ সাইজের কালো কুচকুচে এক শুকর দৌড়ে আসছে আমার দিকে। প্রথমে ধরতে না পারলেও একটু পরেই ধরে ফেললাম কেন আসছে। দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম। তাহাকে অতিক্রম করিয়া যাওয়ার সময় খেয়াল করিলাম উহা পানির মধ্যে কিছু খোজ করিতেছে। যাইহোক আমি ফিরে গিয়ে সবাইকে সাবধান করে দিলাম। এর পরে যাহারা গিয়েছেন, সবাই ছাতা ও বদনার পাশাপাশি একটি করে লাঠি হাতে নিয়ে গিয়েছিলেন । সারাটাদিন ই বৃষ্টিময় থাকাতে আমরা কেউই বের হতে পারিনি, সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আজ থেকে যাবো, বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করবো। সারাটাদিন ঘরের মধ্যে শুয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনোই কাজ ছিলো না। শুধু বিকেলে একটু সময় বৃষ্টি ছাড়া পেয়েছিলাম। সাথে সাথে সবাই বাইরে বের হয়ে ঘুরাঘুরি শুরু করলাম। দু একজন ছাড়া সবাই লুঙ্গি পরে ছিলাম, হয়ে গেলো একখানা লুঙ্গি ড্যান্স। রাতে খাবারের পরে প্রচণ্ড বৃষ্টির সাথে চলেছিলো আমাদের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। সবাই যার যার গলার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছিলাম। সাথে আবার জুয়েলের মোবাইলে লুডু ও খেলেছি । তবে রাতে ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত ছিলো, পরেরদিন বৃষ্টি থাকলেও এর মধ্যেই বের হয়ে যাবো। সেভাবেই সবাই যেনো প্রিপারেশন নিয়ে থাকে। পরেরদিন ( ৭জুলাই ১৯) আসলেই বৃষ্টি ছিলো এবং আমরা আজ এখন যে পথ দিয়ে যাচ্ছি সেই পথেই গিয়েছিলাম। এই যে এখন নেমে চলেছি, এটা একটানা অনেক দূর নেমে গিয়েছে। নেমে কিছুদূর পরেই থান্দুই পাড়ায় পৌঁছাবো। নেমে চলার এই পথ কিছু স্থানে যথেষ্ট ই খাড়া। আর সেদিন বৃষ্টির কারণে এই স্থানে নেমে যাওয়াটা বেশীই রিস্কি ছিলো। 

আজ সকালে রওয়ানা হওয়ার পরে থেকে একটি সমস্যা অনুধাবন করছিলাম। সেটা হলো রোদের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে আমার ফটোফোবিয়া শুরু হচ্ছিলো। চোখ ব্যথার সাথে সাথে মাথা ব্যাথা শুরু হচ্ছিলো। নামার পথেই একটি স্থানে বসে বিশ্রাম নেয়ার সময়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। মজার ব্যাপার হলো সেই ২০১৯ এও এই রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে নামার সময় মাথাব্যথা হচ্ছিলো। সেদিন ও কয়েকটা ওষুধ খাওয়ার পরে কিছুটা কমেছিলো। 

কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আবার নামতে শুরু করি। দুপুর ১ টার দিকে আমরা খুব সুন্দর একটি স্থানে পৌঁছাই। এই জায়গাটা অনেক বেশী সুন্দর। আমরা যেদিক দিয়ে হেঁটে আসলাম তার বাম পাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে একদম ফাঁকা। অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা। খুব সুন্দর বাতাস এই স্থান টিতে। সবাই এখানে কিছু সময় দাড়ালো। ফাঁকা স্থানটিতে গিয়ে সবাই ছবি তুলতে শুরু করলাম। পুরো জায়গাটাতে মাত্র একটি গাছের গুঁড়ি, শুধুমাত্র নিচের তিন ফুটের মত বাকি আছে। সেটার উপরে দাড়িয়ে বসে সবাই সিঙ্গেল মিঙ্গেল ছবি তুলতে শুরু করলাম। জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর, সবাই ই ছবি তুললাম এখানে। এই স্থান থেকে একটু আগালেই ডান দিকে নামতে হয়। হুট করেই মনে পড়ে গেলো ঠিক এই স্থানেই ২০১৯ সালেও তখন সবাই ছবি তুলেছিলাম। আরিফ ভাই ও আমাকে ডেকে একই কথা বললেন এবং নিজেই একটা ছবি তোলার জন্য দাড়িয়ে পড়লেন। একে একে নুর, শিফা, শালদা ও অবশেষে আমি নিজেও এই স্থানে ছবি তুললাম। এরপরে আবারো আমাদের হাটা শুরু হলো।


 
দুপুর দুইটার দিকে আমরা থান্দুই পাড়া পৌঁছালাম। এখানে আপাতত কিছু সময় থাকবো। বিশ্রাম করবো আর রাতের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করবো। কথা বলে একটি বাসায় উঠলাম মোটামুটি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকার জন্য। আগের বার ও এই পাড়ায় কিছু সময় অবস্থান করেছিলাম। পাড়ার কারবারির বাসার পাশে একটি ফাঁকা ঘর আছে, শুধু উপরে চাল দেয়া আর বাকি সবদিকে খোলা, সেখানে অনেকটা সময় বিশ্রাম নিয়েছিলাম। এবং তখনও পর্যন্ত টানা বৃষ্টি পরতেছিল। সেবার টার্গেট ছিলো আরেকটি পাড়া পর্যন্ত পৌঁছানো, নাম নয়াচরণ পাড়া। কিন্তু তখনো জানতাম না আমাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে। 

আজ যে বাসাতে উঠলাম সেখানে সবাই ভিতরে গিয়ে বসলাম। ভিতরের একজন কে বললাম একটু পানি গরম করে দিতে, সেটা দিয়ে আমাদের সাথে থাকা কাপ নুডুলস খাবো। এরপরে আমাদের সাথে খিচুড়ি মিক্স আছে সেটা রান্না করবো, রাতে খাওয়ার জন্য সাথে নিয়ে নিবো। সবাই যে যার মতো সময় কাটাচ্ছে। মোটামুটি একটু ফ্রেশ হয়ে সবাইকে বিশ্রাম নিতে বলা হলো। পলাশ ও আরিফ ভাই গেলো খিচুড়ি বসিয়ে দিতে। বাকিরা কেউ বারান্দায় বসে গল্প করছে, কেউ বাইরে হাঁটছে। শালদা কে দেখলাম একটি গাছে ঝোলানো দোলনায় দোল খাচ্ছে, ইফতি আবার সেটা ভিডিও করে দিচ্ছে। আমি আবার তাদের দুজনের কর্মকাণ্ড ভিডিও করে যাচ্ছি।  দোলনার পাশেই কয়েকটা বাচ্চা তাদের কাঠের চাকা দিয়ে বানানো গাড়িতে করে পাহাড়ের উচুঁ থেকে সাই করে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। সেটা দেখে নুর আর আবির দৌড় দিয়ে গেলো, তারাও চড়ে দেখতে চায় আরকি। তবে চড়তে গিয়ে দেখলো এইটা তাহাদের পক্ষে সম্ভব না, শুধু ছোটরাই এইটা চালাতে পারবে। । বাসার পাশেই অল্প একটু খোলা জায়গায় তিনজন ফুটবল ফেলতেছিলো। 

যাইহোক, সবাই একে একে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। শিফা, ভাবী আর শালদা তো সিরিয়ালে পাশাপাশি শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আমরাও একটু শুয়ে পড়লাম। শুধু খিচুড়ি হয়ে গেলে সেটা আমাদের সাথে আনা ওয়ান টাইম প্যাকেটে ভরে নিতে হবে। এরপরে একটু ঘুমিয়ে নিতে চেষ্টা করবো। মাথা ব্যাথা একটুও কমেনি, অথচ এরই মধ্যে দুইবার ওষুধ খেয়েছি। খিচুড়ি হয়ে যেতেই আমি আর আরিফ ভাই প্যাকেটে বেড়ে নিলাম ও ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিলাম। এরপরে দুজনেই শুয়ে পড়লাম। কিছুটা মনে হয় ঘুমিয়েও ছিলাম, যদিও মনে হচ্ছিলো আমি ঘুমাই নি। কিন্তু পরে পলাশ এর মোবাইলে ছবি দেখে বুঝলাম যেহেতু ছবি তোলা টের পাইনি, তারমানে একটু সময় ঘুমিয়েছিলাম।

মোটামুটি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সবাই সব ঘুছিয়ে নিয়ে রওয়ানা হই। আরিফ ভাই সবার সামনে থাকবেন, জিপিএস দেখে আগাবেন। পলাশ বললো আমাকে সবার পিছনে থাকতে। বাকি সবাইকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে আমরা চলতে শুরু করি। এদিকে এই পাড়া তে ওনাদের আজ অনুষ্ঠান আছে। সবাই খুব সুন্দর করে সেজে ওনাদের প্রার্থনালয়ে গিয়েছেন/ যাচ্ছেন। খুব সুন্দর সুরে গান চলছিলো। সবাই সবার লাইট অন করে এগিয়ে চললাম। এখন ঠিক কোন দিক দিয়ে যাবো সেটা আর আমার ধারণাতে নাই। শুধু আরিফ ভাই ই জানেন আপাতত। ওনার পেছনে পেছনে আমরা সবাই এক লাইনে আগাতে থাকলাম। বাহিরে ভালোই ঠান্ডা। সবাই ই যথেষ্ট প্রিপারেশন নিয়েই বের হয়েছি। এবারের ট্যুরের জন্য একটা উইন্ড ব্রেকার কিনেছি, এটাই খুব কাজে দিবে। প্রথমে একটা ইনার পড়েছি, এর উপরে একটি টি শার্ট, তার উপরে উইন্ড ব্রেকার। আশা করি ভালই সাপোর্ট দিবে। উইন্ড ব্রেকার বাহিরের কোন বাতাস ঢুকতে দেয় না, আবার ভেতরের গরম ও ধরে রাখে। অল্প খরচে খুব ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায় এই জিনিষ দিয়ে। 

প্রথমে কিছুদূর নেমে চললাম, তাই শরীর গরম হচ্ছিলো না। অনেকটা নেমে যাওয়ার পরে মনে হলো রাস্তা ভুল হয়েছে, আবারো ব্যাক করে সঠিক রাস্তায় গেলাম। এবার উঠতে গিয়েই শরীর গরম হতে শুরু হলো। ভালোই চলতেছিল। ঠান্ডা ঠান্ডায় ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা স্থানে এসে উঠতে শুরু করলাম, হঠাৎ সামনে থেকে বললো লাইট বন্ধ। একে একে সবাই বন্ধ করে দিলাম। অন্ধকারের মধ্যেই সবাই একটা স্থানে দাড়ালাম। জায়গাটা যথেষ্ট উচুঁ, এখান থেকে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। কোন এক স্থানে গাড়ি দেখা যাচ্ছিলো। একটু পর পর আসা যাওয়া করছে, তার মানে সম্ভবত রাস্তার কাজ চলছে। কয়েকটা পাড়ার লাইট দেখা যাচ্ছে। আমাদের এখানে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে, আরেকটু রাত হওয়া পর্যন্ত। ব্যাগ রেখে কেউ বসে পড়লাম, কেউ দাড়িয়ে আছি। যথেষ্ট বাতাস এখানে। একটা সময় সবাই ই বসে পড়লাম, চিল্লা পাল্লা ছাড়া গান গাইতে থাকলাম, গল্প চলতে থাকলো। সব লাইট বন্ধ থাকাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সবাই তো তব্দা খেয়ে গেলাম। তারায় তারায় পরিপূর্ন একটি আকাশ। কি যে সুন্দর লাগতেছিলো। গতকাল রাতেই শেরকর পাড়ায় বসে এমন খোলা স্থান থেকে আকাশ দেখার জন্য আফসোস করতে ছিলাম। আর আজকেই কিনা এমন সুন্দর ভাবে দেখার সুযোগ পেলাম। মোটামুটি সবাই পাশাপাশি ও একে অন্যের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লাম। এদিকে হুট করেই দেখি পলাশ একটি কিছু গায়ে জড়িয়ে আছে। আমরা যখন ভাবলাম সেইটা তার রহস্যময়ী কাথা তখন সে বললো এইটা কম্বল, পাড়া থেকে একটা ব্যাগের মধ্যে করে নিয়ে এসেছে । এবার আর যায় কোথায়, যে কয়জন পারলো কম্বলের মধ্যে ঢুকে পড়লো। তবে এভাবে বসার কারণে ভালোই গরম গরম একটা ভাব ছিলো। বসে বসে যদিও গান গাওয়া চলতেছিলো, কিন্তু অনেকেই আমরা কন্টিনিউ করতে না পেরে অন্য কোন কথা বা গল্প করছি। কিন্তু শালদা আর ইফতি একাধারে গেয়ে চলেছে। শেষমেষ আমরাও তাদের সাথে আবারো গলা মিলাই। 

মোটামুটি এক ঘণ্টার মত সময় পরে আরিফ ভাই বললেন সবাই যেনো উঠে পরি। একে একে উঠে আবারো চলতে শুরু করলাম। কোথায় ভেবেছিলাম কঠিন একখানা ট্রেকিং হবে, অথচ এই ট্যুরের শুরু থেকেই শুধু রিল্যাক্স আর রিল্যাক্স । অনেকটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পরে একটা স্থানে এসে আবারো আমরা পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মূলত রেমাক্রী খালের পাড়ে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতেছিলাম। আমাদের সবাইকে রেখে পলাশ আর আরিফ ভাই খুঁজতে থাকলেন। পরে দেখা গেলো যে রাস্তায় যাচ্ছিলাম সেটাই ঠিক ছিলো। কিছু সময়ের মধ্যেই আমরা রেমাক্রী খাল এর পাড়ে চলে আসলাম। পাড় ধরে হাঁটতে থাকলাম। এতক্ষণ গাছপালার ভিতরে থাকাতে বাতাস বা কুয়াশা কিছু টের পাইনি। কিন্তু এখন খাল পারে এসে দেখি ভালই কুয়াশা এবং ঠান্ডা। যদিও ঠান্ডা তেমন টের পাচ্ছি না। যে প্ল্যানে ড্রেস পড়েছি, ভালোই কাজে দিচ্ছে। 

পাড় ধরেই সবাই হেঁটে চলেছি। খালের পরও হাঁটার জন্য অনেক চওড়া জায়গা ফাঁকা। মনে পড়ে যাচ্ছিল আগের ট্যুরের অবস্থা। থান্দুই পাড়া থেকে বিশ্রাম নিয়ে আবারো বৃষ্টির মধ্যেই রওয়ানা হই। সেবারের রুট ছিলো ভিন্ন। অনেকগুলো চড়াই উৎরাই পেরিয়ে একটি পাহাড় চূড়ায় পৌঁছাই যেখান থেকে রেমাক্রী খাল দেখা যাচ্ছিলো। দেখে আমাদের সবার মাথা পুরাই খারাপ। রেমাক্রী খাল নাকি সাঙ্গু নদী দেখতেছিলাম, কারোর ই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। খালে এত বেশি পানি, যে সবাই টেনশনে পড়ে গেলাম। আবার এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেই স্থান থেকে নামার ব্যবস্থা ও সুবিধার না। মাটি খুব নরম। পা দিলেই হাঁটু পর্যন্ত দেবে যাচ্ছে। খুব সাবধানে একে একে সবাই নেমে আসলাম। যথেষ্ট রিস্কি ছিলো এই জায়গাটা। নামতে নামতে একদম পানির কাছে চলে এলাম। পানির স্রোত দেখে সবাই ই খুব অবাক। ওই পার এত দুর যে মনে হচ্ছিলো সাঙ্গু নদী ও হয়তো এত চওড়া হবে না। এদিকে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে আমাদের বাম দিকে যেতে হবে, কিন্তু যাওয়ার কোন রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র উপায় পানিতে নেমে তীর ধরে এগিয়ে যাওয়া, কিন্তু সেটা স্রোতের বিপরীতে যেতে হবে। একে একে সবাই নামতে থাকলাম। বাম পাশে ধরার মত যা পাচ্ছি ধরার চেষ্টা করছি, আর এক পা এক পা করে সামনে আগাচ্ছি। একে তো পানিতে প্রচণ্ড স্রোত, আবার পায়ের নিচে কখনো কাদা, কখনো পাথর পড়ছে, বারে বারে পিছলে যাচ্ছিলো। কিছুদূর সামনেই পানি থেকে ওঠার জায়গা পাওয়া গেলো, একে একে সবাই উঠে পড়লাম। এরপরে পাড়া পর্যন্ত যেতে আরো দুইটা স্থানে পানি পার হতে হয়েছিলো। এক জায়গায় পানির স্রোত কম থাকলেও বুক সমান পানিতে নামতে হয়েছিলো। 

যাই হোক ভালোভাবেই নয়াচরন পাড়াতে পৌঁছেছিলাম। ততক্ষণে সময় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পথে। আরিফ ভাই ও পলাশ এমনভাবে রাস্তা দেখে দেখে আগাচ্ছেন যাতে আমাদের খাল পার না হতে হয়। আস্তে আস্তে কুয়াশা বাড়ছে। একটা সময় তো খালের ওপারেও আর দেখা যাচ্ছিলো না। শুধু কোনভাবে বুঝা যাচ্ছিলো যে ওপারের পাহাড় খাড়া উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। সবাই মোটামুটি চেষ্টা করছি যাতে খুব একটা কথা বার্তা না হয়। রাতের এই ট্রেকিং টা সবাই ই খুব উপভোগ করতেছিলো। তবে খাল পাড়ে থাকাতে সময়ের সাথে ঠান্ডা ও বাড়তেছিলো। একটা স্থানে পৌঁছাই যেখানে খাল পার হতেই হবে। প্রথমেই পলাশ এগিয়ে গেলো, তার পিছনে আরিফ ভাই একে একে বাকিরা যাচ্ছিলো। বিভিন্ন সাইজের পাথর নিচে, পানির স্রোত ও ভালোই এখানে। পাথর গুলোও খুব পিচ্ছিল। খুব সাবধানে আগানোর পরেও শিফা, সাদিক পিছলা খেলো। শিফা পিছলে একদম বসে পড়লো। সামনে ও পিছনে যারা ছিলো ধরে তীরে নিয়ে গেলো। আমি গিয়ে হাঁটু চেক করে দেখলাম, কোন ফ্র্যাকচার মনে হলোনা। তেমন ব্যথা ও নাকি করছে না। কিন্তু পায়ের ব্যালেন্স রাখতে নাকি সমস্যা হচ্ছিলো। আমরা তাকে বুঝিয়ে, ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পলাশ জিজ্ঞাসা করলো আসলেই কোন সমস্যা কিনা। বললাম ফ্র্যাকচার নেই অন্তত। তাহলে হাঁটতেই পারতো না। কিন্তু কিছুটা ব্যথা পেয়েছে, আঘাত এর কারণে আর বাকিটা মনের ভয়। যদিও আমরা তখনো বুঝিনি বেচারীর হাঁটুর মধ্যে একটি লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। যাইহোক ও ব্যথার কথা না বলাতে মনে সাহস পাচ্ছিলাম। তবু আমরা কেউ না কেউ ওকে ধরে এগিয়ে নিচ্ছিলাম। 

টর্চের আলো, সাথে চাঁদের আলোতে আশে পাশের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিলো। খুব সুন্দর লাগতেছিলো এই পাথুরে ট্রেইল টা। একটু পরে আবার খাল পার হয়ে ডান পাশের আরেকটি খাল ধরে এগুতে শুরু করলাম। এই স্থান টা আরো বেশি সুন্দর লাগতেছিলো। সবাই ই টর্চের আলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জায়গাটা দেখতেছিলাম। আর ভাবতেছিলাম দিনের বেলা না জানি কত সুন্দর লাগবে। খালের পার ধরে এগুতে এগুতে একটা জায়গায় এসে ভাবলাম এবার বসা দরকার। তখন রাত ১১ টা বাজে। সবাইকে ব্যাগ থেকে খিচুড়ি বের করে খেতে বলা হলো। সবাই পাথরের উপরে বসে যার যার খিচুড়ি বের করে খেতে শুরু করলাম। সাথে আমাদের শুকনা খাবারের মধ্যে থাকা আচার নিলাম। আরিফ ভাই আবার তার ব্যাগ থেকে বালাচাও বের করে দিলেন। যদিও খিচুড়ি ঠান্ডা ছিলো, কিন্তু সেই সকালের পরে এই রাতে এসে ভারী কিছু পাওয়াতে এই ঠান্ডা খিচুড়ি ই সেই মজার লাগতেছিলো। আর সাথে আচার আর খুব মজার বালাচাও থাকাতে আরো বেশি ভালো লাগতেছিলো। যেই আমি শীতকালে কোনোভাবেই ঠান্ডা ভাত খেতে পারিনা, অথচ এখন এই ঠান্ডা খিচুড়ি কত ভালো লাগছে। আমি একবারে পুরোটাই খেয়ে ফেললাম। 


এদিকে আতিক ভাই তার চুলায় পানি বসিয়ে দিয়েছেন, সবাই কফি খাবো। মিনিপ্যাক কফি গুলো দিয়ে সবাই আরাম করে কফি খেয়ে নিলাম। কি যে শান্তি লাগতেছিলো। আহা। ভাবতেছিলাম, পাগলে না পাইলে এইভাবে রাতে ১২ টার সময়ে পাহাড়ের গহীনে খালপাড়ে খোলা আকাশের নিচে, পাথরে বসে কেউ ঠান্ডা খিচুড়ি খায়। হাহ হা।সবাই দ্রুত সব গুছিয়ে আবার রওয়ানা হলাম। বেশ অনেকটা পথ আসার পরে আবার খাল পার হতে হবে। কিন্তু পার হওয়ার মত সুবিধাজনক স্থান খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আরিফ ভাই এর হতে থাকা জিপিএস এও সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছিলো না। অনেকটা পথ এগিয়ে যাই পার হওয়ার মত স্থান খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু আরিফ ভাই ভাবছেন এতক্ষণে পার হওয়ার জায়গা পেয়ে খাওয়ার কথা। আমাদের বসতে বলে ওনারা এগিয়ে গেলেন। অনেকটা পথ এগিয়ে আবার ফিরে আসলেন। ভাবলাম পথ বুঝি পাওয়া গেলো, কিন্তু না, আবার ফেলে আসা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেন। আমাদের থাকতে বলে গেলেন। 

বসে বসে বাকিদের সাথে গল্প করছি। সাদি আর সাদিক এর গল্পই বেশি শুনলাম। পুরো গ্রুপে মূলত ওরা দুজনই নতুন। বাকিরা সব পরিচিত মুখ ই। তবে আমার জন্য শিফা ও নতুন ছিলো। বসে বসে যখন ভাবছিলাম এই খাল পার হওয়ার রাস্তা পাবো কিনা, তখন মনে পড়তে ছিলো আগের বারেও একই সমস্যায় পড়েছিলাম। নয়াচরণ পাড়া থেকে রেমাক্রী খাল মোটামুটি আধাঘন্টার রাস্তা। সেদিন পাড়ায় পৌঁছে আর যাওয়ার মত সময় বা অবস্থা ছিলো না। তারওপর সারাদিন যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে এখন গিয়ে কি দেখতে পাবো সেটা জানাই আছে। সকালে গিয়ে দেখবো কি অবস্থা, ভেবে রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠে দেখি বৃষ্টি নেই। সবাই উঠে বের হলাম অবস্থা দেখার জন্য। খাল পারে গিয়ে যা দেখলাম সেটার জন্য আসলে কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। এটাকে কোন খাল না বলে খরস্রোতা নদী বলা ভালো। ওপারেই হাঞ্জুরাই পাড়া দেখা যাচ্ছিলো। আমরা ১১ জন এপারে অসহায়ের মত দাড়িয়ে ছিলাম। কোনভাবেই এই পানি পার হওয়া সম্ভব না। পলাশ তাও চেষ্টা করার জন্য পানিতে একটু নামলো। কিন্তু না, এই স্রোতে কোনোভাবেই সম্ভব না। পাশেই একটি ঝর্ণা মত ছিলো, সেখানে কয়েকজন গোসল করে নিলো। পাড়ায় গোসল করার কোন সিস্টেম নাই। সবাই ব্যর্থ মনোরথে ফিরে চললাম। পাড়ায় ফিরে সবাই বসলাম পরবর্তী করণীয় নিয়ে। লালন ভাই বললেন উনি থাকবেন, পানি কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। বৃষ্টি থেমে গেলে পানি ২/৩ দিনেই নেমে যাবে। ওনার সাথে আরো ৫ জন থাকতে মনস্থির করলো। আমি সহ বাকি পাঁচজনকে ঢাকায় ফিরতেই হবে, তাই আর বসে থাকতে পারলাম না। প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে আমরা তখনই ফিরতে শুরু করি। রাতে গিয়ে সিমতলম্পিং পাড়ায় থেকে পরদিন খুব ভোরে থানচি এর উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হবো। এই পাড়ায় আসার পথে আগেরদিন যে স্থানে প্রচণ্ড স্রোতের ভিতর দিয়ে এসেছিলাম, সেদিন ফেরত যাওয়ার সময়ে আমরা নিজেরাই একটি বিকল্প রাস্তা খুঁজে পাই যা গাইড জানতো না। ওই রাস্তা ধরে উপরে উঠে অনেকটা সময় সবাই পেছনে ফিরে আবারো রেমাক্রী খাল এর ভয়ংকর অবস্থা দেখলাম আর খুব আফসোস করলাম যে এত কাছে এসেও ফেরত যেতে হচ্ছে।  (চলবে...)

আব্দুল কাইউম খান মামুন

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত