শোক যাকে শাসক হতে বাধ্য করে
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৫:২৪ | আপডেট : ৮ নভেম্বর ২০২৪, ২০:১৯
ইতিহাসে যত সফল ও সাহসী নারীদের তালিকা পাওয়া যায় তারা সকলেই জন্ম থেকেই সাহস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। অন্য আট দশটা নারীর মতই পুরুষশাসিত সমাজে নানান বঞ্চনার স্বীকার হয়েই তারা বড় হয়েছিলেন, নিজের এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করে মেনেও নিতেন অনেকে। কিন্তু পরিস্থিতি মানুষকে জীবনের এমন এক পর্যায়ে্র সম্মুখীন করে দেয় তখন হাজার বাঁধা তাকে ঘুরে দাঁড়াতে আটকাতে পারেনা। পরিস্থিতি হতে পারে নারীর আপন ও দায়িত্বশীল মানুষের বিয়োগবেদনা। এমনই একজন নারী মহারাণী অহল্যাবাঈ হোলকার।
মহারাণী অহল্যাবাঈ হোলকার ছিলেন ভারতের মারাঠা মালওয়া রাজ্যের হোলকর রাণী। রাজমাতা অহল্যাবাঈ মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের জামখেদ অঞ্চলের চৌন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার রাজধানী নর্মদা নদীর ওপর ইন্দোরের দক্ষিণে মহেশ্বর অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যান।
ইতিহাসের পর্যায়ে তার প্রবেশ একটি দুর্ঘটনার মতই ছিল : মল্লার রাও হোলকর, মারাঠা পেশোয়া বালাজী বাজি রাও এর সেবায় নিয়োজিত একজন সেনাপতি এবং মালওয়া অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তিনি একবার পুণে যাওয়ার পথে চৌন্ডি গ্রামে থামেন, এবং, কিংবদন্তি অনুযায়ী, আট বছর বয়সী অহল্যাবাঈকে গ্রামের মন্দিরের সেবায় নিযুক্ত দেখেন। তার ভক্তি এবং চরিত্র মহিমা অনুধাবন করে, তিনি মেয়েটিকে তার পুত্র খান্দেরাও (১৭২৩–১৭৫৪) এর বধূ হিসাবে হোলকার অঞ্চলে নিয়ে আসেন। ১৭৩৩ সালে তার খান্দেরাও হোলকর এর সঙ্গে বিবাহ হয়। তিনি, ১৭৪৫ সালে, তাদের পুত্র মালেরাও এবং ১৭৪৮ সালে, কন্যা মুক্তাবাঈ এর জন্ম দেন। মালেরাও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং ১৭৬৭ সালে অসুস্থতার কারণে মারা যান। ১৭৫৪ সালে কুমহের অবরোধের সময় তার স্বামীর মৃত্যু হয়। ১৭৫৪ সালে, ইমাদ-উল-মুল্ক মুঘল সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুরের মীর বখশীর অনুরোধে, অহল্যাবাঈ এর স্বামী খান্দেরাও হোলকর, তার বাবা মল্লার রাও হোলকরের সেনাবাহিনীকে নিয়ে, কুমহের দুর্গ অবরোধ করেন। এটি ছিল ভরতপুর রাজ্যের জাট মহারাজা সূরজমলের, যিনি মুগল সম্রাটের বিদ্রোহী ওয়াজির সফদর জং এর সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। খান্দেরাও কুমহের এর যুদ্ধে একটি খোলা পাল্কিতে বসে তার সৈন্যদের পরিদর্শন করছিলেন, তখন জাট সেনাবাহিনীর ছোঁড়া একটি কামানের গোলার আঘাতে তার মৃত্যু হয়। ১৭৫৪ সালে তার মৃত্যুর পর, তার পিতা মল্লার রাও, তার স্ত্রী অহল্যাবাঈকে সতী হওয়া থেকে বিরত করেন। মল্লার রাও হোলকর, ১৭৬৬ সালে, তার ছেলে খান্দেরাও এর মৃত্যুর ১২ বছর পর, মারা যান। ১৭৬৬ সালে, মল্লার রাও এর পৌত্র এবং খান্দেরাও এর একমাত্র পুত্র মালেরাও হোলকর, অহল্যাবাঈ এর কর্তৃত্বাধীনে ইন্দোরের শাসক হন, কিন্তু তিনিও কয়েক মাসের মধ্যেই, ৫ই এপ্রিল ১৭৬৭ সালে মারা যান। তার পুত্রের মৃত্যুর পর অহল্যাবাঈ ইন্দোরের শাসক হন।
অহল্যাবাঈ আরেকটি ঐতিহ্য ভেঙ্গেছিলেন, যখন তিনি তার মেয়ের বিবাহ, একজন সাহসী কিন্তু দরিদ্র যশবন্তরাও এর সঙ্গে দেন। যশবন্তরাও ডাকাতদের পরাজিত করতে সফল হয়েছিলেন।
রানী অহল্যাবাঈ ছিলেন একজন মহান এবং অগ্রণী মন্দির নির্মাতা। তিনি সারা ভারতে শত শত মন্দির ও ধর্মশালা নির্মাণ করেছিলেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত