শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: বাড়ছে ইউটিউব-টিকটক আসক্তি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ১১:০৪ |  আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০২

দেশে বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টানা ১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বেশিরভাগ সময়েই অবসর সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞানের বদৌলতে দীর্ঘ এই অবসরে কম বয়সি শিক্ষার্থীরা ইউটিউব, টিকটক কিংবা লাইকির মতো প্লাটফর্মে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে এর সংক্রমণ মোকাবিলায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধই রয়েছে সেগুলো। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সেটাও দিনের একটি নির্দিষ্ট ও স্বল্প সময়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ১৩ লাখের মতো শিক্ষক। টিকা না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ডা. মোহিত কামাল জানান, কিছুদিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হলেও তৃতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে সেটা হয়নি। ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ৮০০ ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। একটিতে চালক, হেলপার এবং ২ জন শ্রমিকসহ ৪ জন থাকলেও প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ মানুষ ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে দেশের আনাচে-কানাচে যাচ্ছে। ফলে সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাচ্ছে না। গতকালও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে যেভাবে অটোপাস দেয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চমর বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক উপস্থিতির সুযোগ না থাকায় অবসরে একরকম অলস সময় পার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। একইসঙ্গে অন্যান্য সহপাঠী বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশে স্বাভাবিক অন্যান্য সহ-পাঠ্যক্রমের কাজগুলো করতে পারছেন না। তাছাড়া এখন মোবাইল সহজলভ্য। এই সুযোগে তারা ঝুঁকছেন ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক ও লাইকির মতো প্লাটফর্মে। একটি সমীক্ষা বলছে, করোনার এ সময়ে এসব প্লাটফর্মে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে ভিডিও কন্টেন্ট নির্মাতা বাড়াতে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক নানা অফারও দিয়ে আসছে। আর সেসব অফারে থাকছে নগদ অর্থ উপার্জনের সুযোগ। এছাড়াও সময় কাটানো, বিনোদনের এবং অর্থ আয়ের পাশাপাশি এসব প্লাটফর্মে চলছে ভার্চুয়াল খ্যাতি অর্জনের এক অশুভ প্রতিযোগিতা।

রাজধানীর শনিআখড়ার এক গৃহিণী তার ১৪ বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে বলেন, আগে পড়াশোনা করত কিন্তু লকডাউনের কারণে সময় কাটানোর জন্য ইউটিউবে ভিডিও দেখত। এছাড়াও অনলাইন ক্লাসের কারণে স্মার্ট ডিভাইস দিতে হয়েছে মেয়েকে। এখন দেখি সে নিজেই কনটেন্ট বানায়। শুরুতে কয়েকদিন রান্না করল, এখন দেখি ডান্স ভিডিও বানায়। নিষেধ করলে বলে সারাদিন ঘরে করব কি?

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনও স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা কম। বিশেষ করে শহরের তুলনায় তৃণমূল পর্যায়ে আনুপাতিক হারে কম। আবার যাদের আছে সেখানে হয়তো ইন্টারনেটের অবস্থা আশানুরূপ না। কাজেই বিষয়টি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এই প্রবণতা আরো খারাপ হওয়ার আগেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে বিশেষ করে একদম স্থানীয় পর্যায়ে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনা আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে সেগুলো পূরণ করতে হবে।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল বলেন, এটা সত্য যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইউটিউব, টিকটক এসবে উপস্থিতি বেড়েছে। আমরাই শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ডিভাইস দিয়েছি হয়তো ক্লাস করার জন্য। কিন্তু তাদের একটি অংশ সেখানে ইউটিউবে যাচ্ছে, ফেসবুকে যাচ্ছে, এমনকি পর্নো সাইটেও যাচ্ছে। এরজন্য অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হতে হবে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে আমরা বন্ধ রাখতে চাই তা কিন্তু না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখা হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য। আমাদের একটি সমীক্ষা বলছে যে, ১০০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনা হলেও কোনো সংক্রমণ লক্ষণ দেখা দেবে না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে যেটা হবে যে, তারা বাইরে থেকে করোনা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে, আবার বিদ্যালয়েও অন্যদের মধ্যে তার সংক্রমণ করবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত