শহীদ দিবস অমর হোক
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:২৩ | আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬
আজ অমর একুশে ফব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস। রক্তের আখরে লেখা একটি ঐতিহাসিক দিন। বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের এ দিনে এদেশের অকুতোভয় দামাল ছেলেরা অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে সৃষ্টি করেছিল নব ইতিহাস। বাংলাকে তৎকালিন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সেদিন এদশের ছাত্র যুবক মেহনতি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছিল। কিন্তু বাঙালির মুখের ভাষাকে স্তব্ধ করে দিতে পাকিস্তানের তদানীন্তন সরকারের পেটোয়া বাহিনী আশ্রয় নিয়েছিল জিঘাংসার পথ। তারা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। রাজপথ সেদিন রঞ্জিত হয়েছিল বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউরের মতো প্রতিবাদী যুবকদের তপ্ত শোনিতে। বাংলাভাষাকে তার আপন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখতে এই আত্মত্যাগ তাঁদেরকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। আমরা এই দিনটিকে পালন করে আসছি ‘মহান শহীদ দিবস’ হিসেবে। আমাদের জন্য এটা আরও গর্বের বিষয় যে, বায়ান্নর এই শোকাবহ দিনটি আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে গিয়ে আমরা মহান শহীদ দিবসকে যেন বিস্মৃত হতে বসেছি। এখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেউ রকেউ ‘ভাষা দিবস’ বলেও আখ্যায়িত করেন। এটা যে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আত্মদানকারীদের শোকাবহ স্মৃতিকে ক্রমশ মুছে দিচ্ছে সেট বোধকরি আমরা খেয়াল করছি না। ‘মহান শহীদ দিবস’ কথাটির মধ্যে যে স্ম,ৃতি জাগানিয়া ব্যঞ্জনা রয়েছে তা অন্য কোনো কথায় তেমন নেই। ভাষার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মদানের স্মৃতি বিজড়িত একুশে ফেব্রওুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য আত্মশ্লাঘার বিষয়। তবে সে সাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ডামাডোলে মহান শহীদ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য যেন আমরা ভুলে না যাই।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মদান করেছিলেন তাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাভাষা তাঁর মর্যাদার আসনে স্থায়ী হবে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার পর তা অনেকটাই সার্থক হয়েছে এটা বলা চলে। তবে শুধুমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হওয়াতে তা সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। একই সঙ্গে আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন এবং বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করার বিষয়টিও এখানে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে। সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর যে দাবি আমরা করে আসছি স্বাধীনতার পর থেকে, আজ অবধি তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ব্যর্থতার দায় আমাদের সবাইকেই নিতে হবে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা জানেই না বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারতে আসলে কী ঘটেছিল। তারা এখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জানে। তারা এই দিবসের তাৎপর্য সম্বন্ধে সম্যক অবগত নয়। এটা তাদের দোষ নয়। আমরা তাদেরকে এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে কাক্সিক্ষত দেশপ্রেম সেভাবে প্রোথিত হচ্ছে না। এটা আমাদের জাতির জন্য এক অশুভ সংকেত। কারণ নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত না হলে দেশ ও জাতি ক্রমশ অন্ধকারের দিকেই ধাবিত হতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে আধুনিকতার নামে ভিনদেশি বিজাতীয় সাংস্কৃতিক চর্চার সর্বনাশা প্রকোপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আমাদের শিকড় থেকে ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছি। এই অশুভ প্রবণতাকে অবশ্যই রুখতে হবে। আর সেজন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে শেকড়ের কাছে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘মহান শহীদ দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজকের দিনে শপথ নিতে হবে, বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বব্যাপী। তাহলেই বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে। মহান শহীদ দিবস অমর হোক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত