রোবটিক্সের কারণে কর্মহীন হওয়ার আতঙ্কে বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা
প্রকাশ: ৩ জুন ২০২৪, ১৬:৪৭ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮
আজ ৩ জুন ২০২৪ সোমবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বজলুর রহমান বাবলু বলেন, প্রতিযোগিতামূলক প্রযুক্তির ব্যবহার যখন মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধনিক শ্রেণীর কাজে ব্যবহার হয়। এর বিপরীতে গরীব শ্রেণীর মানুষের জন্যও বয়ে আনে আতঙ্ক—উৎকন্ঠা। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবটিক্সের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত গরীব খেটে খাওয়া শ্রমিক—কর্মচারীদের বেকার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পখাত ও পোশাক শিল্পে অটোমেশন ও রোবটিক্স সিস্টেম চালু করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এতে করে যে সকল কারখানায় ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করত সেখানে প্রয়োজন হবে তুলনামূলক খুবই স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী। রোবটিক্স হিসাব, অফিসিয়াল কাজ, লোড—আনলোড ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার মেশিনারীজ পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে রোবট মানেই হলো শ্রমিক। রোবটকে পরিচালনার জন্য শুধু প্রয়োজন হবে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইটি টেকনেশিয়ান। আর বাকি শ্রমিক-কর্মচারীর প্রয়োজন না হওয়ায় দেশের সব কারখানায় রোবটিক্স সিস্টেম চালু হলে প্রায় ২ কোটি কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হতে পারে। এতে করে এসব শ্রমিক—কর্মচারীর পরিবারে নেমে আসবে অমানিশার অন্ধকার। এ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক—কর্মচারী বেকার জীবনে পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে না পারার যন্ত্রনায় বিপথে চলে যেতে পারে। তাতে বাড়তে পারে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান সহ বিভিন্ন অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড।
তিনি আরো বলেন, রোবটিক্স সিস্টেম চালু করার পূর্বে শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মসংস্থান ঠিক রাখার নিশ্চয়তা প্রদান অত্যাবশ্যক। এমনিতেই পোশাক শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। ৮০’র দশকে ৭৫ লাখ, ৯০’র দশকে ৫৫-৫৬ লাখ, ২০০১ সালের দিকে ৪০-৪২ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত থাকলেও এখন ৩০ লাখের নিচে শ্রমিক কাজ করে। সকল সেক্টরে শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও শ্রমিকদের সংখ্যা অর্থাৎ কর্মসংস্থান কমে আসছে। এখন রোবটিক্স পদ্ধতি চালু করায় শ্রমিক কর্মচারীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে।
মাটি কাটার কাজে লোকের প্রয়োজন পড়ে না, রাইস মিলে শ্রমিক কর্মচারী হ্রাস পাচ্ছে, লোড—আনলোড (কুলি) শ্রমিক প্রয়োজনীয়তা হারাচ্ছে, কৃষি কাজে শ্রমিকের পরিমাণ কমে আসছে।
বজলুর রহমান বাবলু বলেন, এথেকে উত্তরণের পথ বের না করতে পারলে শুধু দেশের কিছু সংখ্যক পুজিবাদীরাই লাভবান হবে অপর প্রান্তে খেটে খাওয়া মানুষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, অবৈধ বিদেশি শ্রমিক—কর্মচারীদের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থ অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে, ব্যাংকগুলোর অর্থ লুটপাট, দেশ পরিচালনায় কতিপয় দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও কর্তৃত্ব, অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধ করতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। এরপর যদি প্রায় ২ কোটি লোকের চাকরি হারানোর মতো এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় তাহলে কি হবে এটা বড় ধরনের অনিশ্চিয়তা। দেশি—বিদেশি ষড়যন্ত্র যখন মাথার উপর ভর করছে। এমন কি পাট শিল্প কারখানার মত আমাদের অন্যান্য শিল্প কারখানাগুলোও যে ষড়যন্ত্রের শিকার হবে না এটা বলা মুশকিল। তাই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি যেন কোন শ্রমিক—কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বরং কর্মসংস্থান যাতে আরো বৃদ্ধি পায় সেদিকে অবশ্যই সরকার, কারখানার মালিক ও বিশেষজ্ঞ মহলকে চিন্তা করতে হবে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত