রেহেনা পারভীনের কাব্যগ্রন্থঃ নেমেসিসের ঘরবাড়ি

  সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ১৪:০২ |  আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৫

মুজিব রহমান
--------------------------------

গ্রীক দেবী নেমেসিস পাপ ও অন্যায়ের শাস্তি বিধান করেন। গ্রীক শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল প্রতিশোধ। দেবী নেমেসিসও যারা অন্যায় ও পাপ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেন। যারা পাপ বা অপরাধ করেন তাদের শাস্তি দেন। নেমেসিস চরিত্রকে আমরা দেখি সুপারম্যান বা ব্যাটম্যানের মতো চরিত্রগুলোর মধ্যে। নেমেসিস সৎ গুণাবলীর এক প্রতিভূ। তিনি অহংকারী পাপীষ্ঠদের পতন ঘটান। সাহিত্যে আমরা এমন চরিত্র অহরহ দেখি, সিনেমায় দেখি আরো বেশি। রামায়নের রামকে আমরা নেমেসিস বলতে পারি। অসংখ্য উপন্যাসে বা থ্রিলারে আমরা এমন চরিত্র দেখি। বাংলাদেশের নাট্যকার নূরুল মোমেন- ‘নেমেসিস’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন যাতে তিনি দেখান- অসৎ উপায়ে উপার্জন করে সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা বয়ে আনায় নেমেসিস ওই চরিত্রটির প্রাণ সংহার করেন। সেই নেমেসিসকে কাব্যে স্থান দিয়েছেন কবি রেহানা পারভীন। প্রচ্ছদ দেখলেই যে কেউ ভেবে নিবেন সেই নেমেসিস হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নেমেসিসের ঘরবাড়ি কাব্যগ্রন্থের নাম শেষ কবিতার নাম থেকে নেয়া হয়েছে।

তাহলে কি বঙ্গবন্ধুই আমাদের নেমোসিস? নাকি তাঁর তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে অন্যায় ও পাপ সংঘটিত হয়েছিল তারই ন্যায়দন্ড নিশ্চিত করার প্রত্যয় বা চেতনাকেই বলেছেন নেমেসিসের আবাসস্থল। কবিতাটি পড়েই আমরা বুঝে নিতে পারি। লেখক কবিতাটি শেষ করেছেন এভাবে-
বিবেকহীন বিবেকেরা আত্মহননের লজ্জায় খোলস বদলের ইঙ্গিত
তোমার উৎসর্গিত আত্মার ঔরসে রোজ জন্ম হয় নৈসর্গিক বিজয়
তোমার কলম ভুল ঠিকানা লেখেনি
বৃথা যায়নি লাল দাগে আঁকা একসুতা মাটি
তোমার জন্ম, জন্মে জন্মে জীবনের প্রতিটা পান্থপথ যেনো
শুভ্র শাপলার মতো প্রত্যয়ী নেমেসিসের ঘরবাড়ি।

কাব্যগ্রন্থটিতে লেখকের আত্মপ্রত্যয় আমরা দেখতে পাই- ষেখানে রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ততা, আবেগ ও ভাবনা। তিনি কল্পনা করে সুখ পান, ভাবতে ভালবাসেন। এর বহিঃপ্রকাশ দেখি অনেক কবিতায়। ভূতপূর্বকাল কবিতায় তিনি লিখেছেন-
কেউ একজন চোখ রাখুক, খেই হারানো শহরের পুরানো দীর্ঘশ্বাসে।
ঘুমিয়ে পড়া ইচ্ছের মতো হঠাৎ জেগে উঠুক-
চোখে মুখে বুকে পিঠে ঠোঁটে, আমি প্রেমের মতো উত্তপ্ত হই।

অনুভূতির সব প্রকাশই কবিতা হয়ে উঠে না। চিরচেনা দৃশ্যপট যখন কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে উড়ে বেড়ায়, যা অনুভূত হয় মস্তিষ্কে কিন্তু মনে হবে স্পর্শ করছে অঙ্গে প্রত্যঙ্গে- তাইতো কবিতা। এমন কবিতা সৃষ্টি করা সহজ হয়ে উঠে না। কল্পনাশক্তির ডালপালা যখন আকাশ স্পর্শ করে, হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠে সবার জন্য, ঘটে শব্দের নিখুঁত সমন্বয় তখন তাকে স্বার্থক কবিতা বলি। শব্দগুলো যখন প্রাণবন্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে তখন কবির জন্য নিয়ে আসে সফলতা। অপরাপর কবিতায় তিনি লিখেছেন-
কলমের স্থান হাতে
কবিতার হাঁটাহাঁটি মনস্তাত্ত্বিক উঠোনে
কলম চাইলেই কবিতারা কালি মাখে না
আবার কবিতার চাওয়াতে কলম কখনোই আবেগ ছুঁতে পারে না।

কাব্যগ্রন্থটি একই সাথে পড়া ও দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন লেখক। প্রতিটি কবিতায় রয়েছে আলোকচিত্র। কবি আনোয়ার সেলিম অসাধারণ প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন। হয়তো এই ছবিগুলোর তিনিই আলোকচিত্রি। আলোকচিত্রগুলোর সবই প্রকৃতি নির্ভর। লেখকের কবিতাগুলোর সাথে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে। যা রূপ দিয়েছে যুগলবন্দী প্রকাশনার। অনেক কবিতাতেই তিনি দৃশ্যকল্প এঁকেছেন। শতবর্ষ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
একশবছর ধরে আমি আহ্নিক পটভূমিতে দিন রাত্রির ছায়া এঁকেছি
আমি শতবর্ষ ধরে চেয়েছি
আমার অমৃত পবিত্র গোলার্ধে স্বাচ্ছন্দ্য হোক মায়াবী সূর্যের যাতায়াত
নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে, মূর্খতার প্রতিবন্ধকতা ভেঙে
অসীম বিশ্বাসে, নিঃশ্বাস বদলে ফেলুক জীবনের দীনতা।
আমি লক্ষ লক্ষ জলকণায় উত্তাল সমুদ্র স্রোত হয়েছি
আবহমান পূর্ব পশ্চিমে, গর্জে গর্জে আছড়ে পড়েছি ..

ঝুমঝুমি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটির মূল্য মাত্র ২৫০/- টাকা। প্রথম সংস্করণ নিঃশেষের পরে প্রকাশিত হয়েছে দ্বিতীয় সংস্করণ। কাব্যগ্রন্থটির বহুল সাফল্য কামনা করছি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত