রেলমন্ত্রীর পুনর্বাসনের আশ্বাসের পরও হরিজন ও তেলেগু কলোনি উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ১১:২৯ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৭

রেলমন্ত্রীর পুনর্বাসনের আশ্বাসের পরও রাজধানীর টিটিপাড়া হরিজন ও তেলেগু কলোনি উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে আতঙ্কে দিন পার করছেন এখানকার বাসিন্দারা।

গত ১৫ জুন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় পরিষদের নেতারা টিটিপাড়া কলোনিতে আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করা ও সবাইকে পুনর্বাসনের দাবি জানান। জবাবে রেলমন্ত্রী কলোনির বাসিন্দাদের বহুতল ভবন নির্মাণ করে পুনর্বাসন ও পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ না করার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরদিন আবারও পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের লোকজন কলোনি উচ্ছেদে যান। আজ সোমবার সকালে আবারও কলোনি উচ্ছেদ করতে আসেন রেলওয়ের লোকজন। এই খবরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।

কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার গোপীবাগ (টিটিপাড়া) হরিজন ও তেলেগু কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে ২০১৯ সাল থেকেই। গতকাল রোববার (১৮ জুন) প্রকল্প কর্মকর্তারা কলোনি এলাকা পরিদর্শন করে নতুন করে আরও অন্তত ২০টি পরিবারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন।

অভিযান পরিচালনায় আজ সোমবার (১৯ জুন) সকালে কলোনি এলাকায় ভেকু মেশিন আনাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
উচ্ছেদ আতঙ্কে কলোনির বাসিন্দারা সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদ আতঙ্কে কলোনির নারী-পুরুষ-শিশুরা। তাদের অনেকের ঘরেই চুলা জ্বলছে না। খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করছেন। অনেকেই আশ্রয়ের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে আমাদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি। তাই উচ্ছেদ করা হলে আমাদের ঠিকানা কোথায় হবে?

খবর পেয়ে কলোনি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু ওই সময় উপস্থিত ছিলেন।

পরিষদের নেতৃবৃন্দ টেলিফোনে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। নেতৃবৃন্দ তাকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই কলোনির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। কোনোক্রমেই পুনর্বাসন ছাড়া কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে পূর্বে উচ্ছেদকৃত ১৩৯ পরিবারকেও পুনর্বাসন করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক ওই সময় নেতৃবৃন্দকে জানান, তিনি দ্রুতই কলোনি এলাকা পরিদর্শন করে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত কালবেলাকে বলেন, ‘২০১৯ সালে ওই কলোনির ১১২টি পরিবারকে প্রথম দফায় উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উচ্ছেদ করা ১১২ পরিবারের তালিকা তৈরি করা হলেও আজও পুনর্বাসন করা হয়নি। পরবর্তীতে আরও ২৭টি পরিবারকে তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়।

‘দুই দফায় উচ্ছেদ করা ১৩৯টি পরিবারের সদস্যরা কলোনির বাকি পরিবারগুলোর সঙ্গে তাদের ঘরে গাদাগাদি করে মানবেতরভাবে বাস করছেন। কোনো পুনর্বাসন ছাড়াই এই উচ্ছেদ অত্যন্ত মানবেতর এবং নিশ্চয়ই তা মানবাধিকার পরিপন্থি।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছর আগে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিজন ও তেলেগু সম্পদ্রায়ের মানুষকে এখানে পরিচ্ছন্নতার কাজ, রেলওয়ের কাজসহ বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে আনা হয়। এরা আগে ফুলবাড়ীয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় কলোনি করে বসবাস করত। ৪০-৪৫ বছর আগে তাদের গোপীবাগ (টিটিপাড়া) কলোনিতে আনা হয়।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত