‘রেইনট্রি মামলার বিচারকের পাওয়ার সিজ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবো’

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৯:১৪ |  আপডেট  : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৯

 রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচারকের পাওয়ার সিজ (ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিশিষ্ট আইনজীবী সদ্য প্রয়াত আবদুল বাসেত মজুমদারের স্মরণে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আজ এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও পরিবারবর্গ এ স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। 

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের গুণাবলী ধারণ করতে হবে। তিনি ছিলেন গরীবের আইনজীবী। আইন অঙ্গনে তার অবদান চীরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

স্মরণসভায় আবদুল বাসেত মজুমদারের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, এটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এডভোকেট আবদুল্লাহ আবু, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী প্রমূখ। 

আবদুল বাসেত মজুমদারের পূত্র সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা পরিবারের পক্ষ থেকে তার পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা স্মৃতিচারণে তার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আবদুল বাসেত মজুমদার আইন অঙ্গনে সকলের অপরিহার্য অভিভাবক ছিলেন। তিনি দেখিয়ে গেছেন কিভাবে মানুষের জন্য কিছু করতে হয়। বক্তারা বলেন, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাসেত মজুমদার অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।  

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সিনিয়র এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সদস্য সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

সিনিয়র এডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও  সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন।

আব্দুল বাসেত মজুমদার গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন  অবস্থায় মারা যান। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গরিবের আইনজীবী হিসেবে খ্যাত আবদুল বাসেত মজুমদারের দাফন হয় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শাঁনিচো গ্রামে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর আব্দুল বাসেত মজুমদারকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৫ অক্টোবর তাকে লাইফ সাপোর্টে দেয়া হয়। মেরুদন্ডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।

আব্দুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লাকসামে (বর্তমান সদর দক্ষিণ) উপজেলার শাঁনিচো গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রেইনট্রি মামলার বিচারকের পাওয়ার সিজ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবো।’
 
মামলাটির রায়ে, ৭২ ঘন্টা পর মামলা না নিতে বিচারিক আদালতের রায়ে একটি সুপারিশ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি আজ বলেন, ‘একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি ওনার রায়ের বিষয়বস্তুু নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমি শুধু ওনার এই যে অবজারভেশন (৭২ ঘন্টা পরে পুলিশ যেন কোন ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়) এই যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং অসাংবিধানিক। এবং এই কারণে আমি আগামীকালকে প্রধান বিচারপতির কাছে তার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিচারকের (ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার) যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় সেজন্য একটা চিঠি লিখছি।’ 

এর আগে, গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে আদালত পুলিশের উদ্দেশে এ পরামর্শ দেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় দেন। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাদের খালাস দেন।

খালাস পাওয়া অপর ৪ জন হলেন—সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত