রাবিতে সংঘর্ষে আহত ৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১১:২১ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১
স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর শনিবার (১১ মার্চ) রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। আর স্থানীয়রা ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছে। রাস্তায় ৭ প্লাটুন বিজিবিসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাবি প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ মার্চ [রবিবার] ও ১৩ মার্চ [সোমবার] সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ১৪ মার্চ (মঙ্গলবার) থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা যথারীতি চলবে।
এদিকে, রাত ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকা।
আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে জায়গা দিতে না পেরে আহতদের বাসে করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার পরিদর্শন করেন।
সুলতান উল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আহতদের বাস দিয়ে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
বিনোদপুর বাজার এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মারমুখী অবস্থানে দেখা গেছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে মাঝখানের সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের জন্য রক্ত চেয়ে চিৎকার করছেন উদ্ধারকর্মীরা। কারো মাথা ফাটা, কারো চোখ, কারো নাক, কারো মুখ। এ ঘটনায় মিনিটে মিনিটে বাড়ছে আহতের সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এক উদ্ধারকর্মী বলেন, আমাদের ভাইয়েরা আহত হয়েছেন। সবাই রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে চলে যান। অনেক রক্তের প্রয়োজন। সবাই এগিয়ে যান।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিনোদপুর বাজারে স্থানীয় দোকানপাটে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকসংলগ্ন কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া বিনোদপুর ফটকসংলগ্ন পুলিশ বক্সটি ভাঙচুর করা হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করেও আহত শিক্ষার্থীদের রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়
সংঘর্ষে উভয় পক্ষে আহত হলেও স্থানীয় আহতদের সঠিক সংখ্যা এখনও বের করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেখানে এখনও আহতরা ভর্তি হচ্ছে। আহত অবস্থায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ রাত ১১টার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানিয়েছিলেন, ৮৬ জন আহত ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়েছে অনেক দোকানপাট। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কাজ করছিলেন। এই সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বগুড়া থেকে বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সাথে কথা কাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও সুপারভাইজারের সাথে ঝামেলা বাধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সাথে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে স্থানীয় দোকানদারের ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। এসময় দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২ জন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত