রাতে ফুটপথে পিঠা-চা খেলেন, জনতার সঙ্গে আড্ডা জমালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত

  যশোর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪

যশোর শহর ঘুরে দেখলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে যশোর দড়াটানা, শহরের ধর্মতলা এলাকাসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে জনতার সঙ্গে দিয়েছেন আড্ডা। নিয়েছেন স্থানীয় সব পিঠাপুলি ও খাবারের স্বাদ।

এদিকে বিশেষ কোনো প্রটোকল বাদেই সাধারণ বেশে শহর ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়া বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সবাই। সড়কের পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে খাবার খাওয়া ও আড্ডা দেওয়ার এমন ছবিও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে করছেন প্রশংসাও।

জানা যায়, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের উদ্দেশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন শুক্রবার সকালে যশোরে আসেন। এরপর তিনি বেনাপোল বন্দর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এদিন বিকালে তিনি যশোর সার্কিট হাউজে উঠেন। বিশ্রাম শেষে তিনি রাতে যশোর শহর ঘুরার উদ্দেশ্য বের হন।

প্রথমে তিনি যশোর ঐতিহ্যবাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও কালেক্টরেট ভবন এবং তার পার্ক ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি কালেক্টরেট ভবনের সামনের সড়কে অবস্থিত কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় আইডিয়া পিঠা পার্কের অস্থায়ী ফুড কার্ডে আসেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই উদ্যোগকে তিনি প্রশংসা করেন।

এর পর আইডিয়ার ফুড কার্ডের ভ্যানে সাজানো দেশীয় সব পিঠা দেখে চমকে উঠেন। এসব পিঠার স্বাদ নিতে নিতে তিনি স্মৃতিমন্থন করেন শৈশবকালের পিঠায় দাদি-নানিদের স্পর্শের কথা। এ সময় তিনি আড্ডায় স্মৃতিচারণ করেন এই শহরের নানা স্থাপনা, ব্যক্তি ও সড়কগুলোকে নিয়ে।

তিনি বলেন, এই শহর অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি আমার। অনেক সড়ক এবং স্থাপনা আছে যা এখনো স্মৃতিমন্থন করি। সময়ের সঙ্গে এই শহর পরিবর্তন ঘটেছে বলেও জানান তিনি। তবে সুপরিকল্পিত ভাবে শহরটাকে সুন্দর করতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতাকে এই শহরে তার স্মৃতির নানা ঘটনা বলেও শুনান। এ সময় তার সঙ্গে সেলফি তুলতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়। এরপর তিনি যশোর শহরের অন্য প্রান্তে ধর্মতলাতে যান। সেখানে তিনি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় গরুর দুধের চা পান করেন এবং জনসাধারণের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেন।

এদিকে বিশেষ কোনো প্রটোকল বাদেই সাধারণ বেশে শহর ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়া বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যশোরবাসী। অনেকেই উপদেষ্টার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বলছেন, ‘রাষ্ট্রের জনগুরুত্বপূর্ণ মানুষ; সড়কের পাশে বসে খাবার খাচ্ছে। এমন পরিবর্তন তো চাই!’

স্থানীয় সাংবাদিক মনিরুল ইসলামও উপদেষ্টার সঙ্গে শহরের এক মোড়ে আড্ডা জমিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্তা ব্যক্তি হয়েও যশোরে ফুটপাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে  আড্ডায় বসে পিঠাপুলির স্বাদ নেওয়াটা সত্যিই বিরল ঘটনা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলা। যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।

তিনি বলেন, খোলামেলা আলাপের সময়ে আমি তাকে বলেছি, উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত তরুণদের মধ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে চরম হতাশা রয়েছে। এই হতাশা দূর করতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছি। তিনি গুরুত্বের সঙ্গে এসব কথা শুনেছেন। এটা খুব ভালো লেগেছে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, দেশকে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের আমরা সব সময়ই গণ মানুষের কাতারে আশা করি। গণ মানুষের কাতারে না এলে গণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া কিংবা চাওয়া পাওয়ার অমিলকেও উপলব্ধি করা যায়না। আজ একজন উপদেষ্টা যেভাবে রাস্তার পাশে বসে পিঠা খেলেন, জনতার সঙ্গে সাবলিলভাবে মিশলেন এটি অনুকরণীয়। নেতৃত্ব কোনো ক্ষমতা নয় বরং একটি দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব জনতার কাতারে নেমেই পালন করতে হয়, আজ এই সত্য আরও একবার উপলব্ধি করলাম। উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

জেলা প্রশাসন যশোর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার এ উপদেষ্টা সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শন শেষে শনিবারও যশোরে অবস্থান করে রোববার ঢাকাতে যাবেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত